সাবেক স্ত্রীর ঘরে আগুন লাগানোর পর আত্মহত্যা!

পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। দগ্ধ হয়েছেন মা শাজেনূর বেগম। পুড়ে মারা গেছে তাঁর ১০ বছরের মেয়ে সখিনা আক্তার। ছবি: প্রথম আলো
পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। দগ্ধ হয়েছেন মা শাজেনূর বেগম। পুড়ে মারা গেছে তাঁর ১০ বছরের মেয়ে সখিনা আক্তার। ছবি: প্রথম আলো

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় সাবেক স্ত্রীর ঘরে আগুন লাগানোর পর স্বামী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পেট্রল ঢেলে লাগানো আগুনে ঘরের ভেতরে পুড়ে মারা যায় সাবেক স্ত্রীর ১০ বছরের মেয়ে। দগ্ধ স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে শাজেনূর বেগম (৩০) নামে ওই নারীর ঘরে আগুন লাগানো হয়। শাজেনূর বলেছেন, তাঁর সাবেক স্বামী বেলাল হোসেনসহ কয়েকজন তাঁর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ঘরেও আগুন দেন তাঁরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে আমগাছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বেলাল হোসেন। পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হানিফ সিকদার বলেন, পাথরঘাটার পূর্ব হাতেমপুর গ্রামের খালের পাড়ে আম গাছে গলায় ফাঁস দেন বেলাল হোসেন। পরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমাদের ধারণা অনুশোচনায় গলায় ফাঁস দিয়ে বেলাল আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

ঘরে লাগানো আগুনে পুড়ে মারা গেছে শাজেনূরের ১০ বছরের মেয়ে সখিনা আক্তার। সে শাজেনূর ও তাঁর প্রথম পক্ষের স্বামী মোহাম্মদ হাসানের মেয়ে।

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দগ্ধ শাজেনূরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দগ্ধ শাজেনূরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে দগ্ধ শাজেনূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে আগুন দেখে আমি বাইরে এলে আমার দ্বিতীয় স্বামী (সম্প্রতি তালাক হয়েছে) বেলাল হোসেনসহ কয়েকজন লোক আমাকে জাপটে ধরে পেট্রল ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। দগ্ধ হয়েছেন মা শাজেনূর বেগম। পুড়ে মারা গেছে তাঁর ১০ বছরের মেয়ে সখিনা আক্তার। ছবি: প্রথম আলো
পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। দগ্ধ হয়েছেন মা শাজেনূর বেগম। পুড়ে মারা গেছে তাঁর ১০ বছরের মেয়ে সখিনা আক্তার। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবেশী আব্বাছ আকন, মো. আলমসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাত দুইটার দিকে চিৎকার শুনে তাঁরা দৌড়ে যান। এ সময় ঘরে আগুন জ্বলছিল। ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘর পুড়ে যায়। ওই ঘর থেকে সখিনার পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুন থেকে বাঁচতে শাজেনূর ঘর থেকে বাইরে এলে তাঁর শরীরে পেট্রল দিয়ে আগুন দেয় বেলাল হোসেনসহ কয়েকজন। এতে শাজেনূরের শরীর আগুনে পুড়ে যায়।

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মো. জিয়া উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, শাজেনূরের শরীরের ৮০ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়ে গেছে। তাঁর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে শাজেনূরের চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁর সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।