অনেকে নাগরিক তথ্য দিতে গড়িমসি করছে: ডিএমপি কমিশনার

আজ শনিবার ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
আজ শনিবার ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

জঙ্গি হুমকি থেকে রক্ষা পেতে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ শুরু করা হয়েছে। তবে নাগরিক তথ্য দিতে অনেকের মধ্যে গড়িমসি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। 

আজ শনিবার বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

আজ ১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ। ২১ জুন পর্যন্ত চলবে। ডিএমপির ৫০টি থানার ৩০২টি বিট থেকে একযোগে সংগৃহীত হবে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ ও হালনাগাদ কার্যক্রম করা হবে। নাগরিক তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিআইএমএস) মাধ্যমে ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ করার কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ ও নাগরিকদের মধ্যে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ঢিলেঢালা ভাবের কারণে অপরাধীরা আবার চেষ্টা করছে নগরীতে আস্তানা গাড়তে। এ জন্য এটা আবার শুরু করা হয়েছে। তাই আপনার তথ্য থানায় জমা দিন, পুলিশকে সহায়তা করুন, নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যকে নিরাপদে রাখুন। সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও অপরাধের হুমকি থেকে এই মহানগরীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন।’

নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহের গুরুত্ব সম্পর্কে কমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে আমরা লক্ষ করছি, অনেকে নাগরিক তথ্য দিতে গড়িমসি করছে। নাগরিক তথ্য সংগ্রহ শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আবারও নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ শুরু করছি। ১৫ থেকে ২১ জুন প্রতিটি থানার বিটে বিট অফিসার ওই এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি কমিউনিটি পুলিশের নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার প্রতিটি বাড়ি যাচাই করে দেখবে, নাগরিক তথ্য প্রদানে কেউ বাদ পড়েছে কি না। কেউ বাদ পড়লে তাকে তথ্য ফরম দিয়ে সেই ফরমে তথ্য পূরণ করে ফেরত নেবে।’

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘২১ জুন থেকে পরবর্তী সাত দিন ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে গঠিত সার্ভিল্যান্স টিম র‍্যানডম সিলেকশনের (দৈবচয়ন) মাধ্যমে বিভিন্ন বাসায় যাচাই করে দেখবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কি না। এ সময় কেউ বাদ গেলে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সিআইএমএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে কেউ বাদ না যায়। আমরা চাই ঢাকা শহরের বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য সিআইএমএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করতে।’

নাগরিক তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত শহরে নাগরিকদের তথ্য ডেটাবেইস সংগ্রহ করা হয় নাগরিকদের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার জন্য, কোনো অপরাধ প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং উদ্‌ঘাটনের জন্য। দেরিতে হলেও আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১৬ সাল থেকে অফিশিয়ালি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছি। ইতিমধ্যে আমরা ২২ লাখ পরিবারের ৬৩ লাখ নাগরিকের তথ্য সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসে (সিআইএমএস) সংরক্ষিত আছে।’

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ২০১৯ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত সিআইএমএস সফটওয়্যারে বাড়িওয়ালার সংখ্যা ২ লাখ ৪১ হাজার ৫০৭, ভাড়াটে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৪, মেস সদস্য ১ লাখ ২১ হাজার ৪০, অন্যান্য ১ হাজার১০০, পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২১ ও ড্রাইভার অথবা গৃহকর্মী ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ জনসহ সর্বমোট ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৭ জনের তথ্য সংরক্ষিত আছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এই সিস্টেমে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি ইউনিক ইনডেক্স নম্বর দেওয়া আছে। সেই নম্বর দিয়ে সিস্টেমে সার্চ দিলে কাঙ্ক্ষিত নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সিআইএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ করার ফলে আমাদের এই সাফল্য এসেছে। হোলি আর্টিজান হামলার পর থেকে ঢাকা শহরে নাগরিকের সঠিক তথ্য দেওয়া ছাড়া কেউ বাসা ভাড়া নিতে পারে না।’