বোরোর সঠিক মূল্য না পেয়ে আউশে আগ্রহ কম

বোরো ধানের সঠিক মূল্য না পেয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আউশ উৎপাদনে অনেক কৃষক অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকে জমি অনাবাদি ফেলে রেখেছেন। পরবর্তী আমন চাষাবাদে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা অভিযোগ করেন, সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, ধান কাটা, মাড়াই থেকে শুরু করে বোরো উৎপাদনে বিঘাপ্রতি সাড়ে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মণ ধানে খরচ হয় ৬০০-৬৫০ টাকা। তবে বিক্রি করতে গিয়ে ধানের দাম পাওয়া গেছে ৪৫০-৫০০ টাকা।

কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মোবাশ্বির আলী জানান, গত বছর ২০ বিঘা জমিতে আউশ চাষাবাদ করলেও এবার কোনো জমিই আবাদ করছেন না। প্রচুর বোরো ধান উৎপাদন করেও ন্যায্য দাম পাননি। তাই মনে করছেন, আবাদ করে আর লোকসান গুনে লাভ নেই।

সোনাপুর গ্রামের কৃষক ইউছুফ মিয়া ও আলতা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অন্যান্য বছরে আউশ খেত করলেও এবার করছেন না। বোরো ধানের দাম পাননি, তাই এবার আউশের জমি ফাঁকা রেখেছেন।
গোবিন্দপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, বিলাল মিয়া, চুনু মিয়া; জালালিয়া গ্রামের ফারুক মিয়া, সালাহউদ্দীন, মতিউর রহমান, আতিকুর রহমান; পতনউষারের ধূপাটিলা গ্রামের আকতার মিয়াসহ অনেক কৃষক অভিযোগ করেন, পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করে ধান উৎপাদনের পর দাম পাওয়া যায় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা ঠিকই লাভবান হচ্ছে। যে কারণে এ বছর চাষাবাদ করতে তাঁদের মধ্যে অনাগ্রহের সৃষ্টির হয়েছে। তাঁরা জানান, নিজেদের খাবারের জন্য কিছু কিছু জমি চাষাবাদ করছেন কেউ কেউ।

আগামী আমন মৌসুমেও কৃষকদের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কৃষকেরা। সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে আউশ আবাদ করা প্রচুর জমি অনাবাদি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আউশ মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর চাষাবাদ হয়েছে। তবে অন্যান্য বছর এই সময়ে আউশের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রান্ত হলেও এ বছর তা হচ্ছে না।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২৫০ হেক্টরের বেশি জমিতে আউশ চাষাবাদ হয়েছে। তবে কৃষকেরা জমি ফেলে রাখছেন বা চাষাবাদে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন, এ ধরনের কোনো সংবাদ জানা যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তিনি মনে করেন, এ অঞ্চলে অনেক কৃষকই দেরিতে আউশ চাষাবাদ করেন।