শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি পেলেন নিরাপদ খাদ্যের চেয়ারম্যান

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

শর্ত ও সময় সাপেক্ষে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। আজ রোববার হাইকোর্টে হাজির হয়ে মাহফুজুল হকের নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন।

একই সঙ্গে ভোক্তাদের খাদ্যপণ্য ও সেবা নিয়ে অভিযোগ শুনতে ও নিষ্পত্তি করতে দুই মাসের মধ্যে একটি হটলাইন সেবা চালু করতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অফিশিয়াল নম্বরটি (০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮) ছুটির দিনেও খোলা রাখতে হবে। যাতে ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারেন। ছুটির দিনেও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এর আগে হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে সকালে আদালতে হাজির হন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। তাঁর পক্ষে আইনজীবী কামাল উল আলম ও এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন।

আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে মাহফুজুল হক আজ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। শুনানি নিয়ে আদালত শর্ত ও সময়সাপেক্ষে তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

শর্তে বলা হয়, শুধু ৫২ পণ্য নয়, সব ভেজাল পণ্যের ক্ষেত্রে সারা দেশে বছরজুড়ে কার্যক্রম চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা যাবে না। এসব ভেজাল পণ্যের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার হালনাগাদ তথ্য সময়ে সময়ে আদালতে জানাতে হবে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। ৫২ পণ্য ছাড়াও অপর ৯৩টি পণ্যের বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এমআর হাসান। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী কামরুজ্জামান শুনানিতে অংশ নেন।

শুনানি শেষে আদালত তিন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি জানিয়ে আগামী ১৯ আগস্ট প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। সেদিন পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে সরাতে ও জব্দে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা প্রতিপালন না করার বিষয়ে শুনানি হয়।

বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে সরাতে ও জব্দে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বাস্তবায়নে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ‘আইওয়াশ’ (লোকদেখানো) বলে অভিহিত করেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়ে এ বিষয়ে নিজের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে ১৬ জুন (আজ) তাঁকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। গত ২৩ মে হাইকোর্ট এই আদেশ দিয়েছিলেন।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রুল দিয়ে মানহীন পণ্য অবিলম্বে সরাতে ও জব্দে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ওই দুই কর্তাব্যক্তিকে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়। ২৩ মে অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল।

বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে, যার মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি নিম্নমানের পণ্য রয়েছে। গত ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসটিআই। ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার বা জব্দ চেয়ে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ৯ মে রিটটি করেন।