বালিশ-কাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তা ছাত্রদল নেতা: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। ঢাকা, ১৭ জুন। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। ঢাকা, ১৭ জুন। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বালিশ-কাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তা ছাত্রদল করতেন। তিনি নির্বাচিত ভিপিও ছিলেন।

আজ সোমবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন বালিশতত্ত্ব নিয়ে এসেছেন। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই ঘটনায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর কিছু পরিচয় আমরা পেয়েছি। একসময় তিনি বুয়েটে ছাত্রদলের নির্বাচিত ভিপিও নাকি ছিলেন। তাঁকে সেখান থেকে (দায়িত্ব) সরানোও হয়েছে। যখনই তথ্য পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১ হাজার ১৮৪ কোটি ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি উপস্থাপন করে। এতে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ৮ জন সাংসদ। ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান বলেন, পূর্ত মন্ত্রণালয় দুর্নীতিগ্রস্ত। বালিশ নিয়ে তাদের দুর্নীতির ভয়াবহ রূপ প্রকাশ পেয়েছে। সম্পূরক বাজেটে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে সেটাও দুর্নীতিতে যাবে।

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, রূপপুরের দুর্নীতি সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। সবখানে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। দুর্নীতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

এসবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বালিশতত্ত্ব নিয়ে আমারও একটা প্রশ্ন আছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সেখানে গড়ে উঠছে। সেখানে আর কিছু না পেয়ে পেল বালিশ। এটা কোন বালিশ। কী বালিশ, সেটাও একটা প্রশ্ন? এটা কী তুলার বালিশ। কোন তুলা? কার্পাস তুলা না শিমুল তুলা; নাকি সিনথেটিক তুলা। নাকি জুটের তুলা। আর বালিশ নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করতে দেখলাম। এত মানুষ, এত বালিশ একদিনে কিনে ফেলল কীভাবে? এই বালিশ কেনার টাকার জোগানদারটা কে? সেটা আর বলতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর থেকে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে যারা দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, সব জায়গায় এই জঞ্জাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে। বিএনপি যিনি করেছিলেন, সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় সংবিধান ও সামরিক আইন লঙ্ঘন করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দিতে ভোটারবিহীন সংসদে আইন পাস করিয়েছেন। অস্ত্রের মুখে সায়েম সাহেবকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিয়ে নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন জিয়া। ক্ষমতা দখল করার পর তাদের হাতে যে দল গড়ে ওঠে তাদের চরিত্রটা জানা উচিত। তাদের উৎসটাই হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতিগ্রস্ততার মধ্যে থেকে উঠে আসা।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপবাদ দেওয়ার বহু চেষ্টা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট তাঁর বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দিয়েছিল। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা। কিন্তু একটাও প্রমাণ করতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, প্রমাণ করতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে পৃথিবীর এমন কোনো সংস্থা নেই যে তদন্ত করেনি। কিন্তু তাঁর বা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারেনি। দুর্নীতির কোনো তথ্য না পেয়ে তারা বলতে বাধ্য হয়েছে সমস্ত অভিযোগ ভুয়া।

সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি-জারাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে একবার ঢুকলে সেখান থেকে আর বের করা যায় না। তবে, দুর্নীতি দমন কমিশন এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে।