বাসস্টপেজ কেবল সাইনবোর্ডেই

বাস থামার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে। কিন্তু সেখানে না থামিয়ে নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা–নামা করেন বেশির ভাগ চালক। সম্প্রতি নতুন বাজারে।  দীপু মালাকার
বাস থামার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে। কিন্তু সেখানে না থামিয়ে নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা–নামা করেন বেশির ভাগ চালক। সম্প্রতি নতুন বাজারে। দীপু মালাকার

গণপরিবহনে যাত্রী তোলা–নামানোর জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দেড় শতাধিক নতুন বাসস্টপেজ তৈরি করা হয়। যেসব জায়গায় নির্দেশনা দিয়ে সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়। তবে সেই নির্দেশনা না মেনে এখনো গণপরিবহনকে নির্ধারিত স্থানের বাইরে যথেচ্ছভাবে থামাতে দেখা যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাড়ির চালকেরা ‘বাসস্টপেজ’ ব্যবহার করছেন না। আবার গণপরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীরাও নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ান না। এ জন্য তাঁরা পরস্পরকে দোষারোপ করেন। বাসগুলোর পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে যেখানে-সেখানে থেমে যাত্রী তোলা–নামানো করায় সড়কে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে।

গত বুধবার ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, অনেক চালকই পথচারীদের পারাপারের জন্য তৈরি করা জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর বাস থামছেন। বাসস্টপেজের নির্ধারিত জায়গায় রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত স্কুটার থেমে থাকছে। অন্যদিকে বাসের জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করেছেন সড়কের মোড়ে মোড়ে।

রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার, রামপুরা বাজার, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মৌচাক, ওয়্যারলেস মোড়, মগবাজার মোড়, বাংলামোটর মোড়, শাহবাগ মোড়, ফার্মগেট, সার্ক ফোয়ারা মোড় এবং প্রগতি সরণির মধ্যবাড্ডা, শাহজাদপুর, নতুনবাজার, নদ্দা, কুড়িল এলাকায় ডিএমপির বাসস্টপেজগুলো ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত স্থানে বাস না থেমে সড়কের মোড়ে বা সুবিধামতো জায়গায় থেমে যাত্রী তোলা–নামা করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন রুটে বাস থামানোর জন্য ১৬৭টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অনেকগুলো বাস থামার জায়গার পাশে দুই সিটি করপোরেশন যাত্রীছাউনিও তৈরি করেছে। তবে যাত্রীরা ও বাসচালকেরা এসব নতুন তৈরি করা বাসস্টপেজে না থেমে যাত্রীছাউনির আগে বা পরে থামছেন।

নতুন বাজার বাসস্টপেজে সড়কের উভয় পাশে নির্ধারিত বাসস্টপেজের আগেই বাস থামতে দেখা যায়। এই মোড়ে স্টপেজ থেকে ২০ গজ দূরেই বাস থামছে। যাত্রী তোলার জন্য একটি বাসকে আরেকটি বাসের সামনে বা ঘেঁষে দাঁড়াতে দেখা যায়।

এই মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাসগুলো নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়াচ্ছে না। আগের মতো ইচ্ছেমতো থামায়। আমাদেরও না ওঠে উপায় নেই।’

আর বাসচালকেরা বলেন, যাত্রীরাও আগের জায়গাতেই নামতে চায়। আবার দাঁড়ায়ও সেখানে। এ কারণে নতুন বাসস্টপেজে থামান না।
আকিক পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, ‘যাত্রীরা যেখানে দাঁড়ায় আমরাও সেখানেই দাঁড়াই। আবার অনেক যাত্রী নিজের সুবিধামতো জায়গায় থামানোর জন্য বলে। তখন আমরা সেখানে বাস থামাতে বাধ্য হই।’

বাস এলোমেলোভাবে থামার ক্ষেত্রে বাসচালক ও পথচারী উভয়েরই ভূমিকা আছে বলে মনে করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সড়কে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে যানবাহনগুলোকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার মামলা করা হয়। আবার কখনো বিশেষ অভিযান থাকলে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মামলা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকায় চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে শতভাগ টিকিট কাউন্টারের মাধ্যমে চালানোর পরিকল্পনা আছে। বাসগুলো যাতে বিশৃঙ্খলভাবে না যাত্রী তোলা-নামানো করতে না পারে, সে জন্য এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত দরজা বন্ধ রাখাতে বলা হয়েছে। তবে শতভাগ টিকিট ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীরা টিকিট কাউন্টারেই দাঁড়াবে ও বাসে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।

গত বছরের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় গাড়িচাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী মারা যায়। এরপর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানে বাস থামানোর নির্দেশনাসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা জারি করে। এই নির্দেশনা না মানায় প্রতিদিন অসংখ্য মামলাও করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও গণপরিবহনের ওঠানো নামানোর ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আসছে না।