বংশালে থানার সামনের সড়কই দখলে

সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে রড। পার্ক করে রাখা হয়েছে গাড়ি। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গত সোমবার বংশাল থানার সামনে।  ছবি: জয়দেব সরকার
সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে রড। পার্ক করে রাখা হয়েছে গাড়ি। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গত সোমবার বংশাল থানার সামনে। ছবি: জয়দেব সরকার

বিকেল সাড়ে চারটা। পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের ফজলুল করিম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাখা গোটা তিরিশেক মোটরসাইকেল, একটি পুলিশের ভ্যান এবং কিছু জব্দ করা গাড়ি ও রিকশা, আলমারি, সিন্দুক। এসব ছাড়াও রাস্তার ওপর ফেলে রাখা আছে রড আর রিকশাভ্যান, যা রাস্তাটির প্রায় অর্ধেক অংশই দখল করে রেখেছে।

সড়ক দখলের এ চিত্রটি পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের বংশাল থানার সামনে। ফেলে রাখা রড, যানবাহন, পিকআপ ভ্যান, রিকশাভ্যানের এমনকি বাস পার্ক করে রাখার কারণে সংকুচিত হয়ে এসেছে রাস্তাটি। এতে তীব্র যানজট এই রাস্তায় চলাচলকারীদের সারা দিনের নিত্যসঙ্গী।

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭-৮ মাস ধরে এভাবে বংশাল থানার সামনের রাস্তায় রড, রিকশাভ্যান, বেশ কয়েকটি গাড়ি পড়ে আছে। এতে করে রাস্তাটিতে সারা দিনে যানজট লেগেই থাকে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মালিটোলার বাসিন্দা ফজলু মিয়া হেঁটে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে মালিটোলার বাসায় ফিরছিলেন। তিনি এই রাস্তায় চলতে কখনোই রিকশা বা বাসে চড়েন না। ফুটপাতে হাঁটছেন না কেন? জিজ্ঞেস করতেই রাগে গজগজ করে বললেন, ‘আরে মিয়া, ফুটপাতে কি হাঁটনের জায়গা আছে? ফুটপাতের লগে রাস্তা ভি সব দোকানগুলার দহলে। জ্যামের লাইগা রিকশায় উইঠাও শান্তি নাই। খালি ঈদের কয়টা দিন একটু শান্তি থাহে। এ ছাড়া এই রাস্তার জ্যাম সারা বছরের।’

২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানার অংশ নিয়ে বংশাল থানা গঠিত হয়। থানাটির নিজের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। থানার কার্যক্রম চলছে ফজলুল করিম কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায়। এই থানায় মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আলামত রাখার কোনো ব্যবস্থাও নেই।

থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান স্বীকার করলেন থানার সীমাবদ্ধতার কথা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানা হওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতি আমাদের নেই। মামলার আলামত রাখার মতো জায়গা পাওয়া যায় না। আবার এগুলো ডাম্পিংও করতে পারছি না আইনি জটিলতার জন্য। আমাদের তো কিছু করার নেই। গাড়ি ও আলামতগুলোর জন্য রাস্তা ক্ষীণ হয়েছে।’

শুধু বংশাল থানার সামনের সড়ক নয়, পুরো ইংলিশ রোডের দুই পাশ দখলের কবলে। দুই পাশের কোথাও কোথাও ফুটপাত নেই বললেই চলে। একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, গুদাম ও বিক্রয়কেন্দ্রের দখলে যাওয়া ফুটপাত দিয়ে যে মানুষের চলাচলের সুযোগ নেই। এতে এই দিক দিয়ে পথচারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

তাঁতীবাজার মোড় থেকে চিত্রা সিনেমা হলের সামনে দিয়ে ধোলাইখাল সড়কের মুখ পর্যন্ত সড়কটি ইংলিশ রোড নামে পরিচিত। সড়কটির দৈর্ঘ্য কেবল ৩০০ মিটার। ছোট হলেও সড়কটির গুরুত্ব অনেক। কারণ এর পূর্বে ধোলাইখাল সড়ক, পশ্চিমে বাবুবাজার ব্রিজ, উত্তরে নবাবপুর রোড আর দক্ষিণে সদরঘাটের রাস্তা। সদরঘাটমুখী রাস্তায় আছে আদালতপাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভিন্ন শিক্ষা ও পুরো রাস্তায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জরুরি প্রয়োজনে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে এই রাস্তায় এসে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এলাকাবাসী ও চলাচলকারীদের অভিযোগ, ট্রাক, পিকআপের কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এতে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান এবং সদরঘাট ও বাবুবাজারের দিকে যাতায়াতে অনেক বেশি সময় ব্যয় হয়।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ইংলিশ রোড ঘুরে ওই রোডজুড়ে ছয়টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাইনবোর্ড ‘পার্কিং নিষেধ’ চোখে পড়ল। অথচ প্রতিটি সাইনবোর্ডের পাশে হয় পিকআপভ্যান নয়তো রিকশাভ্যান, ঠেলাগাড়ি পার্ক করে রাখা। ঢাকা আয়রন স্টিলের সামনেই তেমনই একটি সাইনবোর্ড। অথচ সাইনবোর্ডের বাঁ পাশে একটি ঠেলাগাড়ি এবং ডান পাশে একটি পিকআপে লোহার পাত বোঝাই চলছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘ইংলিশ রোডটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। প্রচুর মানুষের যাতায়াতে যানজট লেগেই থাকে। অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের দোকানের সামনে মালামাল ওঠানামা করতে পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, ঠেলাগাড়ি পার্ক করে রাখে। আর থানার সামনে মালামালে রাস্তা চিকন হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করি, নানাভাবে যাতে রাস্তা দখল না হয়।’