ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় চলাচল

নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়নের তুইতাল-বকচর গ্রামে ইছামতীর শাখা নদীতে বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে পারাপার হতে হয়।  ছবি: প্রথম আলো -2
নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়নের তুইতাল-বকচর গ্রামে ইছামতীর শাখা নদীতে বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে পারাপার হতে হয়। ছবি: প্রথম আলো -2

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের তুইতাল-বকচর গ্রামে ইছামতীর শাখানদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা চলাচল করছেন। তিন যুগের বেশি সময় ধরে স্থানীয় ব্যক্তিরা এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় স্কুলশিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

গত বুধবার এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিকারীপাড়া ইউনিয়নের শেষ প্রান্তের নারায়ণপুর, সুজাপুর, শেরপুরসহ নয়নশ্রী ইউনিয়নের নতুন ও পুরোনো তুইতাল, বকচর, বরইচড়া, আফজালনগর, শৌল্লা, তাশুল্লাহ, বাংলাবাজার, বিলপল্লী এবং বারুয়াখালী ইউনিয়নের কাউনিয়াকান্দি গ্রামের লোকজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এই পথে সাঁকো পার হয়ে তুইতাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বকচর উচ্চবিদ্যালয়, তুইতাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও তুইতাল বাজার, মসজিদ, তুইতাল গির্জা, ব্যাংক ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এই বাঁশের সাঁকোই চলাচলের একমাত্র ভরসা। বর্ষায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ প্রতিদিন হাজারো পথচারীকে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

তুইতাল এলাকার বাসিন্দা শ্যামল গোমেজ অভিযোগ করেন, কেউ কথা রাখছে না। জনপ্রতিনিধিরাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

বকচর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য যেন এটা একটা মরণফাঁদ।

কাউনিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কাজী সালাহউদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখনো এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেতু নির্মিত হলেই এলাকাবাসীর জন্য যাতায়াতব্যবস্থাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন নতুন সুযোগের সৃষ্টি হবে।

তুইতাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিনা গোমেজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলাকার শত শত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। এখানে সেতু না হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। বৃষ্টির দিনে বাঁশের সাঁকো ভিজে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এতে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ভয়ে বেশ কিছু ছাত্রী নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। এমনকি ছাত্রীরা বাঁশের সাঁকো পারাপারের ভয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে।

বকচর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে আসেন ভোট চাইতে। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন আমাদের যাতায়াতের পথে সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর গ্রামবাসীর খোঁজখবর নেন না।’

নয়নশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মোল্লা বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি গুছিয়ে এনেছে। আশা করছি, শিগগিরই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে যাবে।’

নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আনোয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে শিগগিরই খালের ওপর সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।’