মাদারীপুরে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

মাদারীপুরে উপজেলা নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় যুবলীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ওই যুবলীগ নেতার নাম এরশাদ মুনশি (২৩)। তিনি শহরের সবুজবাগ এলাকার বেলায়েত মুনশির ছেলে। এরশাদ পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আজ বুধবার দুপুরে শহরের সতীনাথ সড়কের লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নির্বাচনে সহিংসতার জেরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওবায়দুর রহমান খানের সমর্থক জসিম গৌড়া তার লোকজন নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এরশাদ হত্যার প্রতিবাদে দুপুর তিনটার দিকে শহরের কলাতলা এলাকায় জসিম গৌড়া ও তার ভাই সবুজ গৌড়ার বসতঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এতে তাদের একটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় ওই এলাকার অন্তত ১০টি ঘর ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে জসিম গৌড়া। তাঁকে নির্বাচনের আগে ধরতে গিয়েও আমরা পাইনি। পুলিশের নজরদারি আছে। জসিম দ্রুত ধরা পড়বেন। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের ধরা হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ বেলা একটার দিকে সবুজবাগ এলাকার আড়িয়ল খাঁ নদের পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন নৌকা প্রতীকের সমর্থক এরশাদ। এ সময় ওত পেতে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক ও যুবলীগ কর্মী জসিম গৌড়া তাঁর দলবল নিয়ে এরশাদকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন। এরশাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকেরা এরশাদকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা ইমরানুল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে আনা দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই এরশাদ মারা যান। তাঁর ঘারে ও পিঠে ধারালো অস্ত্রে আঘাতে মারাত্মক জখম ছিল।’

এদিকে মাদারীপুর পুলিশ ও র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, ‘এই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। হত্যার কারণ এখন বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

নিহতের মামা দাবি করা পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নৌকার সমর্থক হওয়ায় জসিম গৌড়া তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এরশাদকে হত্যা করেছে। জসিমের বিরুদ্ধে ডাকাতি, খুনসহ একাধিক মামলা রয়েছে। নির্বাচনে নৌকার পক্ষের কাউকে হত্যার আশঙ্কা করে পুলিশ সুপারকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল। কিন্তু জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাই এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবাইদুর রহমান খান। নৌকা প্রতীক নিয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতা না হলেও নির্বাচন পরিবর্তী সহিংসতায় এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে দাবি করছেন নৌকার সমর্থকেরা। মাদারীপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি আতহার সরদার বলেন,এরশাদ মুনশি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলেন। এ কারণে তাঁর ওপর প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষিপ্ত ছিল।

ঘটনার পর অভিযুক্ত জসীম গৌড়া ও তাঁর ভাই সবুজ গৌড়া এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের মুঠোফোনে ফোন করা হলে সেগুলো নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ওবাইদুর রহমান খানকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তার ছেলে আবিদুর রহমান খান বলেন, জসীম ও এরশাদ এরা দুজনই আমাদের সমর্থক। ওরা নির্বাচনে আমাদের হয় প্রচারণাও করেছেন। এলাকায় আধিপত্য নিয়ে ঝামেলা থাকায় হয়তো এরশাদ খুন হয়েছেন। কিন্তু এর সঙ্গে নির্বাচনী কোনো সহিংসতা নেই। নির্বাচনে পরাজিতরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।