বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ১

সংঘর্ষের সময় চীনা এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কলাপাড়া, পটুয়াখালী। ছবি: প্রথম আলো
সংঘর্ষের সময় চীনা এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কলাপাড়া, পটুয়াখালী। ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় আহত এক চীনা শ্রমিকের বুধবার সকালে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

নিহত ওই চীনা শ্রমিকের নাম ঝাং ইয়াং ফাং (২৬)। তিনি পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে সবিন্দ্র দাস নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক পাওয়ার ব্লকের ৭৫ মিটার উঁচুতে বয়লারের ওপর কাজ করছিলেন। নিরাপত্তা বেল্ট ছিড়ে নিচে পড়ে তিনি মারা যান। পরে তাঁর লাশ গুম হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লার এলাকার একটি অফিস, ক্যান্টিন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ ও আশপাশের স্থাপনায় হামলা এবং ভাঙচুর চালান। এরপর তাঁরা চীনা শ্রমিকদের আবাসিক এলাকায় ঢুকে হামলা ও তাণ্ডব চালান।

এই ঘটনায় সন্ধ্যায় বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে রাতে দ্বিতীয় দফায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন চীনা ও দুজন বাংলাদেশি নাগরিক। আহত চীনা শ্রমিকেরা হলেন লিন কু মু (২৭), ঝ্যাং হুয়া (৩৪), ঝ্যাং সিং থান (২৫), ঝাং হু (২৬) ও জু ঝাং (৫৪)। আহত বাংলাদেশি দুজন হলেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৪৭) ও শ্রমিক মো. জহুরুল ইসলাম (৬৫)। আহত এই দুজন বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন বলেন, মঙ্গলবার মধ্যরাতে ছয় চীনা নাগরিক ও দুই বাংলাদেশি শ্রমিককে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঝাং ইয়াং ফাং নামের চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়। বাকি পাঁচ চীনা নাগরিকের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় এক বাংলাদেশি শ্রমিক বয়লারের ওপর থেকে পরে মারা যান। এ নিয়ে বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।’

এই ঘটনায় বুধবার সকালে হেলিকপ্টারে করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শক করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁকে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেন।