নৌকার পরাজয়ে যত কারণ

>
  • নৌকার প্রার্থী তানিয়া সুলতানা স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত নন। তাঁর রাজনীতি ও সামাজিক যোগাযোগ—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক।
  • স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তানিয়ার যোগাযোগ কম। ভোটের মাঠে তার প্রভাব পড়েছে।
বিজয়ী প্রার্থী মুশতাকুর রহমান
বিজয়ী প্রার্থী মুশতাকুর রহমান

প্রার্থী স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত নন। অনেক নেতা ওপরে ওপরে নৌকার পক্ষে থাকলেও ভেতরে-ভেতরে অন্যের পক্ষে কাজ করেছেন। আবার জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগই মাঠে নামেননি। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানিয়া সুলতানার পরাজয়ে এমন একগুচ্ছ কারণ সামনে আসছে। গোলযোগের কারণে স্থগিত হয়েছিল কটিয়াদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এখানে নতুন করে ভোট হয় গত মঙ্গলবার। ভোট গ্রহণকালে কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। ভোট পড়েছে ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

নির্বাচনে জয় পেয়েছেন মুশতাকুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। মুশতাকুর ভোট পান ১৬ হাজার ৩৮০। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রার্থী হওয়া তানিয়া সুলতানার চেয়ে ১ হাজার ১০ ভোট বেশি পেয়েছেন দলের উপজেলা কার্যনির্বাহী পর্ষদের এই সদস্য। দলটির অপর দুই বিদ্রোহী আলী আকবর ও আলতাফ উদ্দিনও ভোট পেয়েছেন উল্লেখ করার মতো। আলী আকবর ১২ হাজার ৪ ভোট এবং আলতাফ ১১ হাজার ৪১২ ভোট পান।

ভোটের পরদিন গতকাল বুধবার নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ বেশ শান্ত এবং স্বাভাবিক ছিল। লোকজনের আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছিল নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের বিষয়টি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে ভোটার ও দলীয় কর্মীদের নানা ভাবনা।

নৌকার পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব গিয়াস উদ্দিন বললেন, নেতাদের মুখে মধু ছিল। কিন্তু অন্তরে বিষ পুষে রেখেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিষয়টি ধারণার পর্যায়ে ছিল। ভোটের ফলাফল বেরোনোর পর তার প্রমাণ মিলল।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, নৌকার প্রার্থী তানিয়া সুলতানা স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত নন। তাঁর রাজনীতি ও সামাজিক যোগাযোগ—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। তানিয়া কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেই তাঁর সখ্য। কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতার¯স্নেহভাজন হওয়ার কল্যাণে দলীয় মনোনয়ন পান। অল্প দিনের ব্যবধানে স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদেরও স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তানিয়ার যোগাযোগ কম। ভোটের মাঠে তার প্রভাব পড়েছে।

কর্মীদের এমন ধারণার সঙ্গে একমত উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলামও। তিনি বলেন, সমস্যা হলো নির্বাচনের আগে তানিয়াকে কেউ চিনত না। ভোটে বিষয়টি কাজ করেছে। নেতাদের পিছুটানের কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর তানিয়ার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন দলীয় অনেক নেতা। একে তো নারী, তার ওপর স্থানীয় রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ—এই দুই অজুহাত ছিল তাঁদের। দলটির তিন বিদ্রোহীর পক্ষে তলে তলে কাজ করেছিল এই নেতাদের একটি অংশ। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদেরও অজানা ছিল না। প্রচারণার শেষের দিকে এসে ওই অংশকে চাপ দেওয়া শুরু করে কেন্দ্র। চাপে পড়ে ওই নেতারা মাঠে নামেন ঠিকই, কিন্তু তা ছিল লোকদেখানো এবং পদ ধরে রাখার কৌশল।

এ প্রসঙ্গে বিজয়ী প্রার্থী মুশতাকুর রহমান বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, চাপ দিয়ে কাউকে মাঠে নামানো যায়। কিন্তু মন পাওয়া যায় না। ভোটে আমার সেই কথা প্রমাণিত হয়েছে।’