আ.লীগে ভুল মনোনয়ন, সিপিবি নেতা জয়ী

কামারখন্দ উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম শহিদুল্লাহ।
কামারখন্দ উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম শহিদুল্লাহ।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সমর্থন ছিল একজনের প্রতি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় অন্যজনকে। অন্যদিকে নৌকার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সিপিবি নেতা। সাদামাটা মানুষ হিসেবে এলাকায় তাঁর জনসমর্থন ভালো। এই দুই কারণে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

গত মঙ্গলবার কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা এস এম শহিদুল্লাহ। তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার ৬২১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের আবদুল মতিন চৌধুরী পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭৮৯ ভোট। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিন চৌধুরীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন সিপিবির নেতা শহিদুল্লাহ। কামারখন্দের ৪টি ইউনিয়নের ৪৯টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ৭৪১ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৪১ শতাংশের কিছু বেশি।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা ছিল। প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের সমর্থন ছিল আনোয়ার হোসেনের প্রতি। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু তদবির করে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন নিয়ে আসেন আবদুল মতিন চৌধুরী। তিনি দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আনোয়ার হোসেন নীরব ভূমিকা নেন। তাঁর সমর্থকেরাও নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। ওদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান মতিন চৌধুরীর তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম। তাই তৃণমূলের সঙ্গে মিলেমিশে প্রচারণা চালাতে পারেননি তিনি। প্রচারণার জন্য মাঠে নামলেও তিনি তেমনটা সাড়া ফেলতে পারেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক গাজী সোহরাব আলী বলেন, জেলা পর্যায় থেকে তাঁরা কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় কামারখন্দে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে দলীয় প্রার্থী মতিন চৌধুরীকেই তাঁরা নির্বাচনী মাঠে পাননি। প্রার্থী নিজেই মাঠে সক্রিয় না থাকলে বিজয়ী হওয়াটা কঠিন। আর সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তৃণমূলকে অবমূল্যায়ন ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের অভাবে এমন ভরাডুবি হয়েছে।

তবে পরাজিত প্রার্থী আবদুল মতিন বলেন, কেন্দ্র থেকে দল তাঁকে মনোনয়ন দিলেও বিশেষ মহলের সমর্থন না থাকায় তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন পাননি। দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি। তবে তাঁর পক্ষে সাধারণ ভোটারদের সমর্থন ছিল। নৌকার ভরাডুবির জন্য দলীয় একটি বিশেষ মহলের অসহযোগিতাকেই দায়ী করেন তিনি।

এদিকে আবদুল মতিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন এস এম শহিদুল্লাহ। তিনি এর আগে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে আগে থেকেই তাঁর একটা জনসমর্থন ছিল। পাশাপাশি শহিদুল্লাহ এলাকায় সাদামাটা মানুষ হিসেবে পরিচিত। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকার সময় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর কাছে যেতে পেরেছেন। তিনি সব মানুষের কথা শুনেছেন এবং সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন।

এস এম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘এই নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছেন। এ কারণেই আজ আমি নির্বাচিত হয়েছি।’

নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীকে ১৮ হাজার ৪৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সেলিম রেজা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জয়নাল আবেদীন নলকূপ প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ১৬ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শম্পা খাতুন একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।