যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী-শাশুড়িকে মারধরের অভিযোগ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী ও শাশুড়িকে বেদমভাবে মারপিট করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ে ও তার মায়ের ছবিটি আজ শনিবার বেলা দশটার দিকে তোলা। ছবি: এম রাশেদুল হক।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী ও শাশুড়িকে বেদমভাবে মারপিট করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ে ও তার মায়ের ছবিটি আজ শনিবার বেলা দশটার দিকে তোলা। ছবি: এম রাশেদুল হক।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রী ও শাশুড়িকে মারধর করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে গোয়ালন্দ উপজেলার স্বরূপারচক গ্রামের মারুফা বেগমের সঙ্গে পশ্চিম নলডুবি গ্রামের মনোয়ার সরদারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জামাতাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার দেওয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের জন্য নববধূকে চাপ দিতে থাকেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী মনোয়ার তাঁর ভাই, মা ও বাবার সহায়তায় স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করেন। ৯ জুন মারুফার কাছে দেড় লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন মনোয়ার। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারুফাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁরা।

মারুফার বাবা আবদুস ছালাম শেখ অভিযোগ করে বলেন, মেয়ে বাড়ি এসে পুরো ঘটনা জানালে অনেক কষ্টে এক লাখ টাকা জোগাড় করে জামাইবাড়ি পাঠানো হয়। গত মঙ্গলবার ফের ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন তাঁরা। আর টাকা দিতে পারবে না জানিয়ে দিলে মেয়েকে বেদম মারপিট করেন মনোয়ার ও তাঁর বাড়ির লোকজন।

বৃহস্পতিবার মারধরের খবর পেয়ে দুপুরেই স্ত্রী মালেকা বেগমকে জামাইবাড়ি পাঠান মারুফার বাবা। মারধরের কারণ জানতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে পরিবারের সবাই মিলে মারুফা ও তাঁর মাকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। মাকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়ে মেয়েকে ঘরে আটকে রাখেন তাঁরা। মাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে বিষয়টি গোয়ালন্দ থানায় জানালে পুলিশ মেয়েকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে। পরে মেয়েকেও চিকিৎসার জন্য একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত মারুফা বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী মনোয়ার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারধর করেন। ভাশুর, শ্বশুর ও শাশুড়ির কথামতো যৌতুকের টাকা দাবি করেন। একটি শিশু আছে। সন্তানের কথা চিন্তা করে অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’

মালেকা বেগম বলেন, ‘মেয়ের সুখের কথা ভেবে কয়েকবার অনেক কষ্টে টাকা দিয়েছি। আমরা গরিব মানুষ। কত টাকা দিতে পারি? এর আগে আমার খালা নুরজাহান বেগমকেও মারধর করেছেন তাঁরা।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকি বলেন, মায়ের কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হতে আরও কয়েক দিন লাগবে।

গতকাল বিকেলে মারুফার বাবা আবদুস ছালাম শেখ বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী মনোয়ার সরদার, ভাশুর আনোয়ার সরদার, শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ও শ্বশুর মোশাররফ সরদারকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শহর আলী বলেন, ‘মারুফাকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়ার পর উদ্ধার করেছিলাম। থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে আসামিরা পলাতক।’