সুনামগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার, চলবে বিআরটিসির বাস

সুনামগঞ্জে বেসরকারি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ২৪ জুন থেকে ডাকা পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবহন মালিক-শ্রমিক বৈঠক হয়। পরে রাত ১১টায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস চালু হয়েছে গত ৩ জুন। এর প্রতিবাদে ওই দিনই সুনামগঞ্জ-সিলেট পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে বাস ধর্মঘট হয়। এরপর আবার ২৪ জুন সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ধর্মঘটের ঘোষণার পরই এটিকে ‘অযৌক্তিক’ দাবিকে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে আন্দোলন শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার রাত আটটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সার্কিট হাউসে সভা আহ্বান করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। সভায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা, পৌর মেয়র নাদের বখত, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. চাঁন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. সাহারুল ইসলাম, পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সেলিম আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শহরের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নাগরিকের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারে আহ্বান জানিয়ে বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস চলতে পারবে না-এই দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায়। মানুষ এই সড়কে উন্নত বাস সার্ভিস চায়, ভোগান্তি ও হয়রানি থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু ভালো সেবা দিতে বেসরকারি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যর্থ হয়েছেন। এখন বিআরটিসির বাস চালুর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডেকেছেন তারা। এই ধর্মঘট গণবিরোধী। এটা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।

সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর রাত ১১টায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বাস মালিক ও শ্রমিকেরা দাবি করেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের বিআরটিসির বাস সরকারি ব্যবস্থায় চালাতে হবে। কোনো এজেন্ট নিয়োগ করা যাবে না। এর পাশাপাশি, বেসরকারি বাস সার্ভিসের সঙ্গে বিআরটিসির বাসের সময় সমন্বয় করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বেসরকারি বাস মালিক ও শ্রমিকদের শর্ত দেওয়া হয়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই সড়কে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ভালো বাস সার্ভিস চালু এবং যাত্রী হয়রানি ও ভোগান্তি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ওই সড়কে চলাচলকারী সব বাসের কাগজপত্র যাচাই করবে প্রশাসন। এই বিষয়গুলিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরাও সম্মত হন।

সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহারুল ইসলাম বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘট সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল। বলা যায় আন্দোলনের মুখে এটা স্থগিত হয়েছে। সভায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমরা সড়কে কোনো হয়রানি চাই না, ভালো সেবা চাই। এটাই ছিল আমাদের মূল কথা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সবার মাঝে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছিল। আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান হয়েছে। মানুষের দাবি হচ্ছে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ভালো পরিবহন চলবে, কোনো ভোগান্তি থাকবে না। সেটি নিশ্চিত করার জন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বলা হয়েছে, তারাও রাজি হয়েছেন। পাশাপাশি বিআরটিসির বাস সার্ভিসও সব নিয়ম মেনেই এই সড়কে চলাচল করবে। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।