চলনবিলে মা মাছ নিধনের 'মহোৎসব'
বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত চলনবিলের বিভিন্ন জলাশয়, নদী-নালা ও খাল-বিলে চলছে মা মাছ নিধনের ‘মহোৎসব’। একশ্রেণির অসাধু জেলে নদী ও বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বাদাই, কারেন্ট, খোরা জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মা মাছ ধরছেন। সেগুলো সিংড়া মৎস্য আড়ত ও হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও মৎস্য বিভাগকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
গত শুক্রবার সরেজমিনে নাটোরে চলনবিল ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মৎস্য অভয়াশ্রম দহ, জোড়মল্লিকা, সাতপুকুরিয়া, বিয়াশ, আত্রাই নদসহ বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে একশ্রেণির অসাধু জেলে বাদাই, কারেন্ট, খোরা জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ডিমে ভরপুর ট্যাংরা, বাতাসি, পুঁটি, মলা, মাগুরসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ প্রকাশ্যে নিধন করছেন। সরকারিভাবে মা মাছ নিধন নিষেধ থাকলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ডিমে ভরপুর ওই মাছগুলো সিংড়া মৎস্য আড়ত ও আশপাশের স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ওই মাছগুলো স্থানীয় লোকজন বেশি দাম হাঁকিয়ে কিনে নিচ্ছেন।
চলনবিলের সিংড়া মৎস্য আড়তে ডিমে ভরপুর প্রতি কেজি ট্যাংরা ৭০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৭০০ এবং চান্দা, বাতামি, চিংড়িসহ বিভিন্ন মিশালি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এ সময়টা মাছের প্রজননকাল। চলনবিলের মা মাছ ধরা না হলে তারা বিলের মুক্ত জলে ডিম ছাড়ত। এতে বিলে মিঠা পানির মাছ কয়েক শ গুণ বেড়ে যেত। নির্বিচারে মা মাছ নিধনে দেশীয় প্রায় ৩৯ প্রজাতির মাছের বিলুপ্তি ঘটেছে। তিনি অভিযোগ করেন, মা মাছ নিধন বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এর সঙ্গে এলাকার একশ্রেণির অসচেতন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত।
নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্টে মা বোয়াল মাছ নিধনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। তবে জনবলসংকটের কারণে পুরো এলাকায় একসঙ্গে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।