জীবনে একবার হলেও সেখানে ঘুরে আসুন

ওমরাহর নিয়ত করে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলাম মক্কার উদ্দেশে। বিকেল পাঁচটায় ছিল ফ্লাইট। সন্ধ্যা সাতটা বাজে, সাড়ে সাতটা বাজে, রাত আটটা বাজে, সাড়ে আটটা বাজে। অবশেষে রাত নয়টার কাছাকাছি ইফতারের সময় হয়। পরে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ আদায় করি। যাহোক, স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ কণ্ঠে পৌঁছালাম মক্কা নগরীতে। হোটেলে লাগেজ রেখেই ছুটে চললাম কাবা ঘরের দিকে। ছয়-সাত মিনিট পথ হাঁটতেই মসজিদুল হারামে এসে পৌঁছলাম। মসজিদের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই চোখের সামনে চলে এল কালো গিলাফে আবৃত কাবা ঘর। যে ঘরটি জন্মের পর থেকে টিভিতে দেখে আসছি আর আজ তা চোখের সামনে। এ এক শিহরণ, নৈসর্গিক অনুভূতি। শরীর আমার কাঁপছে আর দোয়া করছি আল্লাহর দরবারে। মাতাফে গিয়ে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করলাম। নিয়ম অনুযায়ী তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে কাঁদলাম। এরপর জমজমের পানি খেয়ে গেলাম সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উদ্দেশে। যদিও এখন সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং মানুষের সুবিধার্থে কোনো পাহাড় বোঝা যায় না। সেখানেও নিয়ম অনুযায়ী দুই পাহাড়ে সাতটি দৌড় দিলাম। সব শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে মাথার চুল ফেলে ওমরাহর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলাম। এরপর সাহরি খেয়ে রোজা রাখলাম।

পরদিন পুনরায় আবার তাওয়াফ, সায়ি জিয়ারত ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে নিজের দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রার্থনা এবং এভাবে শবে কদর পবিত্র মক্কা মোকাররমায় উদ্​যাপন করলাম। ২৮ রমজান একটি মাইক্রোযোগে মক্কা থেকে চলে গেলাম মদিনায়। মদিনায় রাতে হোটেলে পৌঁছে মন মানল না তাই চলে গেলাম মসজিদে নববিতে। নবীজির (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করতে। হোটেল থেকে ছয়-সাত মিনিট হাঁটাপথের পরই মসজিদে নববি। প্রাণ জুড়িয়ে গেল সেই মসজিদ দেখে। বিশাল মসজিদ, যার চারদিকের দেয়ালে ৪০টির মতো গেট আছে। গভীর রাত, অথচ সেখানে এতটা রাত মনে হবে না। হাঁটিহাঁটিতে পা চালাতেই নজরে পড়ল মসজিদের ভেতরে একটি বড় ঘরের স্বর্ণের তিনটি গেট। ঘরটির সামনে যেতেই আপনার মন শিউরে উঠবে। মনের অজান্তেই যেন চোখ ভিজে গেল। নবীজি (সা.) কে সালামসহ দোয়া পড়লাম, যা গাইড বইয়ে লেখা ছিল। নবীজির (সা.) রওজার পাশের স্থানই রিয়াজুল জান্নাহ। মসজিদের সব স্থানে লাল রঙের কার্পেট থাকলেও সেই স্থান সবুজ কার্পেট ঢাকা। এটিকে জান্নাতের বাগান বলা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সেখানে নামাজ পড়তে অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে একাধিক সময় আমি নামাজ আদায় করেছি।

এভাবে আমাদের সময় কেটে গেল আর রাত চারটায় মধুর কণ্ঠে আজান শুনলাম। মনে করলাম ফজরের আজান কিন্তু না, পৃথিবীতে একমাত্র দুই স্থানে তাহাজ্জুদের আজান হয়—মসজিদুল হারাম আর মসজিদুল নববিতে। তাহাজ্জুদ নামাজের পর পাঁচটায় আবার আজান হলো। দলে দলে লোক আরও বাড়তে থাকল। ভেতরে নারীদের আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। আমরা সবাই নামাজ পড়ে হোটেলের পথে রওনা দিলাম। অসাধারণ সেখানকার সকাল। গরমের দেশ অথচ মদিনা ঠান্ডা। এ জন্য হয়তো বলা হয়েছে সোনার মদিনা। সেখানে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্​যাপন করলাম। ঈদের সকালের অনুভূতি সেখানে না থাকলে বোঝানো যাবে না। নামাজ শেষে সেমাই-রুটি খেয়ে পুনরায় পবিত্র মক্কা নগরীর দিকে রওনা দিলাম। জীবনে একবার হলেও সেখানে ঘুরে আসুন। মনে তৃপ্তি পাবেন সন্দেহ নেই এবং বারবার যেতে মন চাইবে।

লেখক: শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ্ বিভাগের প্রধান