ভার্চ্যুয়ালে অর্ডার কাতান শাড়ির, বাস্তবে যা পেলেন তিনি

অনলাইন পেজে দেওয়া শাড়ির ছবি
অনলাইন পেজে দেওয়া শাড়ির ছবি

পারভীন সুলতানা গত ১৯ জুন ফ্যাশানহাউসবিডি নামক একটি অনলাইন হাউস থেকে তিনটি কাতান শাড়ি কেনেন। শাড়ি তিনটির মূল্য ৫ হাজার ১৩০ টাকা। সেই অনুযায়ী টাকাও পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু প্যাকেট খুলে যে তিনটি শাড়ি পেলেন, তার সঙ্গে অনলাইনে অর্ডার করা শাড়ির কোনো মিল নেই। সবচেয়ে বড় কথা সেগুলো কাতান শাড়িও নয়, অত্যন্ত নিম্নমানের শাড়িগুলো।

পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ জুন অনলাইনে অর্ডার করেন। পরদিন এস এ পরিবহনে শাড়ি তিনটি আসে। সেখানেই দাম ও অন্যান্য খরচ পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু হাতে পাওয়া প্যাকেট বাসায় এনে খুলেই বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন তিনি। এস এ পরিবহন থেকে যে মানি রিসিটটি দেওয়া হয়েছে সেখানেও প্রেরকের জায়গায় লেখা রয়েছে লুনা ফ্যাশান নামে একটি দোকানের নাম। ফ্যাশনহাউসবিডি’র কথা উল্লেখ করা নেই।

পারভীন সুলতানা জানালেন, গত রোববার তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ‘অনলাইন শপিং হাউসের বিরুদ্ধে অর্ডারমাফিক পণ্য না দেওয়ায়’ একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

পারভীন সুলতানা জানালেন, ‘বাসায় এসে প্যাকেট খুলে দেখি একেবারে অন্য তিনটা শাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম, ফোন ধরল । সমস্যা বলার পর মেসেঞ্জারে উত্তর দিল-‘ শিট,ভুল হয়ে গেছে, আমরা এক্সচেঞ্জ করে দিব’। আসল শাড়িগুলো আবার এস এ পরিবহনে পাঠানো হবে বলে জানায়। কিন্তু ২২ জুন বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও এস এ পরিবহন থেকে ফোন না আসায় আবার ওদের ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন ধরছে না। অন্য ফোন থেকে ফোন করলাম, তাও ধরছেনা। খুদে বার্তা পাঠালাম। মেসেঞ্জারে লিখলাম । মেসেঞ্জার তারা সিন করছে, কিন্তু উত্তর দেয় না। এরপর আমার মেসেঞ্জার বাউন্স হচ্ছে অর্থাৎ তারা আমাকে ব্লক করেছে।’

পারভীন সুলতানা ঝুমা বললেন, ‘অনলাইনে যে শাড়ির ছবি তা অনেক সুন্দর ছিল। তবে অন্যান্য অনলাইন ফ্যাশন হাউসের তুলনায় দাম অনেক কম লেখা ছিল। তখন একবার খটকা লেগেছিল। তবে এভাবে ধরা খাব তা বুঝতে পারিনি। চেয়েছিলাম কাতান শাড়ি, আর আমাকে যেগুলো পাঠানো হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের শাড়ি। আকাশ-পাতাল ফারাক।’

অনলাইন ফ্যাশান হাউস বিডির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ,সাভার হেমায়েতপুর হাউজিং কমপ্লেক্স, লেভেল ৪/৭১৪ ।

কুরিয়ারে পাঠানো শাড়ির ছবি
কুরিয়ারে পাঠানো শাড়ির ছবি

ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার এই ফ্যাশন হাউসটির বিরুদ্ধে পারভীন সুলতানার অভিযোগ প্রসঙ্গে বললেন, ‘অভিযোগ সম্পর্কে জানার পর পেজের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। পেজে লাইকের সংখ্যা খুব কম। বুঝতে পারছি এরা নতুন অথবা মানুষকে ঠকানোর জন্যই এসেছে। এ ধরনের কয়েকজনের জন্য আমাদের ইন্ডাস্ট্রিজের ক্ষতি হচ্ছে। তবে পেজের লোকজন সরি বলেছেন, বলেছেন সঠিক পণ্য পাঠিয়ে দেবেন।’

নাসিমা আক্তার বললেন, ‘এই ফ্যাশন হাউসটি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে, আমরা এই ধরনের পেজ চিহ্নিত করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেব, এ ছাড়া আমরা আমাদের পেজেও বলে দেব, যাতে এই ধরনের পেজে কেউ লেনদেন না করেন। আমাদের সদস্য হলে ভোক্তাদের ঠকাতে সাহস পেত না। ক্রেতাদেরও অনলাইন থেকে পণ্য কেনার আগে সচেতন হতে হবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যভুক্ত কিনা তাও একটু দেখে নিতে পারেন।’

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ফ্যাশন হাউসটির পেজে দেওয়া টেলিফোন নম্বরে ফোন করলে একজন জানালেন তিনি সেখানের কর্মচারী। পেজের মালিকের ফোন নম্বর দেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে।