কামাল হোসেন আমাদের জন্যই কাজ করেছিলেন: নাসিম

মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি
মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট গড়ে কামাল হোসেন কার্যত আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করেছেন। এ দাবি করেছেন সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ নাসিম।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় এ কথা বলেন নাসিম।

নাসিম বলেন, ‘রাজনীতি হচ্ছে কৌশল। বিএনপির বন্ধুরা বারবার ভুল করেছে। ২০১৪ সালে একবার “গোস্যা” করে নির্বাচনে আসেনি। আবার ২০১৮ সালে নির্বাচন এল—লোক ভাড়া করে।’

নাসিম বলেন, ‘কাকে ভাড়া কাকে করল? আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত নেতা, অত্যন্ত শিক্ষিত ও বিদগ্ধ নেতা, আওয়ামী লীগে চক্রান্ত করে ব্যর্থ কামাল হোসেনকে ভাড়া করে সামনে দাঁড় করাল।’

নাসিম বলেন, ‘তিনি (ড. কামাল) আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে মাঠ খালি করিয়ে দিলেন আর আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। এই হচ্ছে তাদের ভাড়াটের মুরদ। ওরা কামাল হোসেনকে ভাড়া করল ওদের জন্য, আর কাজ করল আমাদের জন্য।’

নাসিম বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বারবার হেরে গেছে। ভোটে নেমে মাঠ থেকে পালিয়ে গেছে। তারেক রহমান এসে বিএনপির বারোটা থেকে তেরোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি আন্দোলনও করতে পারে না।

মো. নাসিমের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদে বারবার বলা হচ্ছে যে কৌশলে বিএনপি হেরে গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জাতিসংঘ, টিআইবি, যুক্তরাষ্ট্র, নিউইয়র্ক টাইম, দিল্লির গবেষক-বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন।

হারুন বলেন, সাবেক মন্ত্রী নাসিম উপহাস করে বলেন, বিএনপি রাস্তায় দাঁড়াতে পারে না। বিএনপির কত নেতা–কর্মী অপহরণ, ব্রাশফায়ার, বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন। বিএনপির মহাসচিবের নামে ৮৪টি মামলা।

হারুন বলেন, ‘যে সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, সেই সংসদ নির্বাচনে আগের রাত্রেই ব্যালট ভর্তি করা হয়, আর পরের দিন গণনা করা হয়। যে কারণে এটাকে বলা হচ্ছে মধ্যরাতের পার্লামেন্ট।’

হারুন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় সংলাপে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের মামলার তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপির ২২ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৪০ জন প্রার্থী ভয়ানকভাবে আহত হন। ভোটাররা প্রতারিত ও অপমানিত হয়েছেন। ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেননি। নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হারুন প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি জাতীয় সংলাপের সময় ওয়াদা করেছেন, সে ওয়াদা কি পূর্ণ হয়েছে?’

হারুন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। গত ১০ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯০ হাজার মামলা হয়েছে। অধিকাংশই ভুয়া। প্রায় ২৫ লাখ আসামি । তিনি এসব মামলা নিয়ে একটি সংসদীয় কমিটি করার দাবি জানান।

গত ১০ বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে দাবি করে হারুন বলেন, ‘জানি না, এখানে কথা বলে বাড়ি ফিরে যেতে পারব কি না। রাস্তা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমার ভাগ্যে ইলিয়াসের ভাগ্য জুটবে কি না, সালাহউদ্দিনের ভাগ্য জুটবে কি না, এ কথা বলতে পারছি না।’

হারুনের বক্তব্যের একপর্যায়ে সরকারি দলের সদস্যরা হইচই করে প্রতিবাদ জানাতে থাকলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী হারুনের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় সদস্য আপনি বাজেটের ওপর বলছেন না কথা। আপনি বাজেটের ওপর বলুন।’ এর জবাবে হারুন বলেন, এতক্ষণ সাধারণ আলোচনা হয়েছে। বক্তব্যের ধারা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। আজকে বক্তব্যের ধারা চেঞ্জ করে দিয়েছেন। সরকারি দলের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে চুপ করেন। আপনারা আপনাদের সময় বক্তব্য দিয়েন।’

হারুন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি বিলের নিন্দা জানান। তবে তিনি বলেন, বিচার করতে গিয়ে যাতে কোনো বাড়াবাড়ি না হয়। জাতীয় নেতারা সে বিষয়গুলো বিবেচনা করেছেন।
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে হারুন বলেন, এটি একটি অদ্ভুত সরকার। মহাজোটে ভোট করে শরিকদের বিরোধী দলে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের চেহারা মলিন। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ওনারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিব্রত। হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ফরমায়েশি বিরোধী দল দিয়ে সংসদ কার্যকর করা যাবে না। এগুলো সত্য।

লুটকারীদের কেন ছাড় দেওয়া হলো
আজ সংসদে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘ব্যাংক সেক্টর নিয়ে কথা উঠছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হলো, তাদের কেন ছাড় দেওয়া হলো? ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কৃষকেরা ১–২ হাজার টাকার জন্য সার্টিফিকেট মামলার আসামি হবে আর ঋণখেলাপিরা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেবে এটা কেন হবে? কোর্ট এত কথা বলে, কোর্ট কেন স্থগিতাদেশ দেয়।’

বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংসদ নাসিম। তিনি বলেন, ‘আমরা হাজার কোটি টাকার বাজেট করব, লক্ষ কোটি টাকার বাজেট করব। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, টাকা ফেরত যাবে, তা হবে না। অবশ্যই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।’

নাসিম বলেন, ‘কিছু ব্যবসায়ী আছেন তাঁরা ব্যাংকের মালিক, গার্মেন্টস, ওষুধ কোম্পানি এমনকি সংবাদপত্রেরও মালিক। এই ধরনের বহুমুখী ব্যবসায়ী সরকারি দলে ঢুকে আছেন। সংসদ হবে রাজনৈতিক নেতাদের। যাঁরা ব্যবসায়ী, কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি, এঁরা সুখের পায়রা। আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে লাইসেন্স নিয়ে তাঁরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তাঁরা সংবাদপত্রের মালিক হয়ে দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছেন।’

মো. নাসিম মুঠোফোন ও সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল প্রকল্পের খরচ বাড়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘যারা প্রজেক্ট বানায় তাদের ধরে পেটানো উচিত।’ রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি জাতীয় সংসদে ‘ক্যামেরা সেশন’ দাবি করেন।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা হলেও এর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে নতুন কর্মসংস্থান হবে।

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ আ স ম ফিরোজ, কামাল আহম্মেদ মজুমদার, নুরুজ্জামান আহমদ, ইসরাফিল আলম, ফজিলাতুন্নেসা প্রমুখ বক্তব্য দেন।