দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। ঢাকার আদালত চত্বর, ২৩ জুন। ছবি: আসাদুজ্জামান
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। ঢাকার আদালত চত্বর, ২৩ জুন। ছবি: আসাদুজ্জামান

প্রতারণার মাধ্যমে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান নামের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গত সোমবার তিনজনের নামে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজিএম) আদালতে মামলা করেছেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিন আসামি হলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার হারুনদিয়া গ্রামের হারুন অর রশীদ ওরফে রনি, তাঁর বোন পারভীন আক্তার এবং বোনজামাই (আরেক বোনের স্বামী) নাজমুল হুছাইন।

মিজানুরের আইনজীবী আবদুস সাত্তার মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, হারুন অর রশীদ নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মিজানুরের কাছ থেকে ৪ লাখ ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্য দুই আসামি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আদালত এ ঘটনা তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনজীবী আবদুস সাত্তার আরও বলেন, হারুন নামের ওই লোক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কোনো চাকরি করেন না। তিনি ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন।

যেভাবে প্রতারণা
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। ডায়াবেটিসের রোগী হওয়ায় গত বছর চিকিৎসা নিতে বারডেম হাসপাতালে যান মিজানুর। সেখানেই হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। হারুন তখন নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন।

মামলায় মিজানুর অভিযোগ করেন, পরিচয়ের পর হারুন তাঁকে বলেছিলেন, তিনি (হারুন) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলসহ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন থেকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। একই কথা বলেন হারুনের বোনজামাই নাজমুল ও বোন পারভীন। তিনি হারুনের কথা বিশ্বাস করেন। একপর্যায়ে প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের অনুদানের টাকা তোলার জন্য খরচপাতি লাগবে বলে জানান হারুন। এরপর তিনি মিজানুরের কাছ থেকে গত বছরের ২০ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বরের মধ্যে ৪ লাখ ১ হাজার টাকা নেন। সাভারের হেমায়েতপুরের বাসস্ট্যান্ডে একটি চায়ের দোকানে বসে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে মিজানুর এই টাকা হারুনকে দিয়েছিলেন।

মিজানুর আদালতকে বলেন, টাকা নেওয়ার পর হারুন তাঁকে দুটি মোবাইল ফোন নম্বর দেন। ওই সব নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেই মোতাবেক তিনি হারুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। কিছুদিন যাওয়ার পর হারুন তাঁকে (মিজান) আশ্বস্ত করে বলেন, কিছুদিনের মধ্যে তিনি অনুদানের ২০ লাখ টাকা পেয়ে যাবেন। এভাবে হারুন তাঁকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আরও কয়েক সপ্তাহ ঘোরাতে থাকেন। একপর্যায়ে হারুনের দেওয়া দুটি মোবাইল ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।

মিজানুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, হারুনের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে সাভার থানা, র‍্যাব ও ডিবি অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। পুলিশের সহায়তায় তিনি হারুনসহ অন্যদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পান।

হারুনের বোনজামাই ও মামলার আসামি নাজমুল হুছাইন মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস আগে ডিবি অফিস থেকে তাঁকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিজানুরের মুখোমুখি করা হয় তাঁকে। তখন তিনি জানতে পারেন, মিজানুরের টাকা মেরে দিয়েছেন হারুন অর রশীদ। নাজমুলের দাবি, মিজানুরের টাকা মেরে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনোভাবে জড়িত নন। হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।

একই কথা বলেন অপর আসামি পারভীন আক্তারের মেয়ে আইরিন। তাঁর দাবি, মামা হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁর মা সম্পূর্ণ নির্দোষ। নাজমুল জানান, হারুনেরা পাঁচ ভাই ও চার বোন।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিজানুর বলেন, হারুন অর রশীদকে বিশ্বাস করে তিনি ৪ লাখ ১ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন। মিজানুর আরও বলেন, ‘কণ্ঠ শুনলেই আমি হারুনকে ঠিকই চিনে ফেলব। আমি বিচার চাই।’