অতিরিক্ত গতি, বেশি যাত্রী, নাকি যন্ত্রাংশের ত্রুটি দায়ী?

কুলাউড়ায় রোববার রাতে লাইনচ্যুত হয় উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি। ছবি: প্রথম আলো
কুলাউড়ায় রোববার রাতে লাইনচ্যুত হয় উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি। ছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত গতির চেয়ে জোরে ছুটছিল ট্রেনটি। যাত্রীও বেশি ছিল। ট্রেনের যন্ত্রাংশে ত্রুটি থাকারও সম্ভাবনা আছে। মৌলভীবাজারে কুলাউড়া উপজেলায় গত রোববার রাতে ট্রেন দুর্ঘটনায় এসব বিষয় জড়িত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

ওই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। অতিরিক্ত গতি, বেশি যাত্রীর সঙ্গে ট্রেনের যন্ত্রাংশের ত্রুটি থাকার বিষয়টা মিলিয়ে দেখছেন তাঁরা।

এদিকে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুধবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন। কুলাউড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদি উর রহিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

একটি তদন্ত কমিটির সদস্য রেলওয়ের ঢাকার প্রধান দপ্তরের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আহসান জাবির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার থাকার কথা। গতি বেশি থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা।

প্রকৌশলী আহসান বলেন, ট্রেনটির ব্রেকেট ও চাকার কিছু যন্ত্রাংশ ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ট্রেনের ১৭টি বগিতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। বেশি গতি, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন অথবা যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। তবে অন্য কোনো কারণেও থাকতে পারে।

ট্রেনের গতি সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের ঢাকা সেকশনের চালক আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় জেনে ‘পরে কথা বলছি’ বলে সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও ফোন ধরেননি বরমচাল রেলস্টেশনে দায়িত্বে থাকা সহকারী স্টেশনমাস্টার সফিকুর রহমান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবসরে যাওয়া রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক প্রকৌশলী বলেন, ট্রেনের বগিগুলো অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। যন্ত্রাংশ মেরামত হচ্ছে না। জোড়াতালি দিয়ে চলছে।

ওই প্রকৌশলী বলেন, ব্রেকের সময় ট্রেনের বগির নিচে চাকা আটকানোর জন্য কুলিং রড নামের একটি যন্ত্র টানা দেওয়া থাকে। ব্রেক কষতে গিয়ে এটি বেশি নিচে নেমে গেলে রেললাইনের সঙ্গে আটকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নির্ধারিত গতিসীমার বেশিতে চললে অথবা ট্রেনের চাকা, ব্রেকেটসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রকৌশলী আরও বলেন, ট্রেন ছাড়ার আগে এটিকে ওয়াস পিটে (পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্ধারিত স্থান) নিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়। তবে সিলেট রেলস্টেশনে ওয়াস পিট নেই। ট্রেন ছাড়ার সময় রেললাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু স্বাভাবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে।

উল্লেখ্য, আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি রোববার রাতে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। ট্রেন বরমচাল স্টেশন অতিক্রম করে কুলাউড়া আসার পথে রেলপথের একটি কালভার্ট ভেঙে পেছনের পাঁচটি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। এর মধ্যে একটি বগি সেতুর নিচে এবং চারটি বগি রেললাইনের পাশে কাত হয়ে পড়ে। এতে চারজন যাত্রী নিহত হন। আহত হন শতাধিক যাত্রী।