বদরগঞ্জে ঘুষ দিয়েও মিলছে না বিদ্যুৎ

রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাড়ারদহ গ্রামে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয় এক বছরে আগে। কিন্তু তার টানা হয়নি।  প্রথম আলো
রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাড়ারদহ গ্রামে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয় এক বছরে আগে। কিন্তু তার টানা হয়নি। প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়নের ভাড়ারদহ গ্রামে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে এক বছর আগে ৩৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার না টানায় বিদ্যুৎ–সংযোগ পাননি গ্রাহকেরা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় তাঁরা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।’

গত শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের বাস। এক বছর আগে সেখানে একের পর এক বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু টানানো হয়নি বৈদ্যুতিক তার। গ্রামের হরিদাস চন্দ্র অভিযোগ করেন, ‘গ্রামের বিধান চন্দ্র রায় নামের (৪৮) এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাজের ঠিকাদার এক বছর আগে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপনের সময় দ্রুত সংযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রতি গ্রাহকের কাছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে চান। আমরা গ্রামের ১০৩ জন মানুষ দ্রুত বিদ্যুৎ পাওয়ার আশায় প্রত্যেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিধান চন্দ্রের হাতে দিই। কিন্তু বিধান বাকি টাকার জন্য ঘুরছেন। টাকা না দেওয়ায় গ্রামে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’

ওই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিধান চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভাই, এই দেশে কি টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়? বিদ্যুতের জন্য ঠিকাদার আশরাফের সঙ্গে দুই লাখ টাকা চুক্তি হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা তুলে তাঁকে দিয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী এখনো ঠিকাদারকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ঠিকাদার গ্রামে বৈদ্যুতিক তার পাঠিয়েছেন দুই মাস আগে। বাকি টাকা না পাওয়ায় তিনি খুঁটিতে তার টানছেন না।’ বিধান চন্দ্র আরও বলেন, শুধু ঠিকাদারকে ঘুষ দেওয়াই নয়, তাঁর শ্রমিকেরা গ্রামে যত দিন কাজ করেন, তত দিন দুই বেলা ভাতও খাওয়াতে হয়। তাঁরা ভালো তরিতরকারি ছাড়া ভাত খান না।’

অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই গ্রামের বৈদ্যুতিক কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে ঘুষ দাবি করিনি এবং নিইওনি। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ ঘুষ নিয়ে থাকলে সেটার দায় তাকেই নিতে হবে।’ এক বছরেও ওই গ্রামে বৈদ্যুতিক তার না টানানোর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এত দিন তার পাওয়া যায়নি।’

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড রংপুরের সহকারী প্রকৌশলী তারিক সিদ্দিক বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিতে ঘুষ লাগে না। বিনা টাকায় মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।’ এক বছর আগে ঠিকাদারকে ঘুষ দিয়েও ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার বিদ্যুৎ পায়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর চেয়ারম্যান শেখ আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘অনেক ঠিকাদার নতুন লাইন নির্মাণ করতে গিয়ে এলাকার দালালদের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে থাকেন। এসব নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের বোর্ড মিটিংয়ে আমি নিজেই একাধিকবার আলোচনা করেছি। বেশি কিছু বললে ঠিকাদারেরা লাইন নির্মাণকাজে আরও কালক্ষেপণ করে থাকেন। তাঁরা সব সময় অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে
কাজ করেন।’