সমাজটা কোথায় যাচ্ছে: হাইকোর্ট

বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটিকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সারা দেশের সবাই এই ঘটনায় মর্মাহত। সমাজটা কোথায় যাচ্ছে?

বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে আসা খবর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস। এরপর আদালত আজ বৃহস্পতিবার ওই মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না বা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা বেলা দুইটায় আদালতকে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলা হয়েছে।

গণমাধ্যমে দিনেদুপুরে স্ত্রী আয়েশা আক্তারের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস আদালতে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, এখনো মামলা হয়নি। এমন অপরাধের ঘটনার বিচার যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয় ও বিচারহীন হয়, তাহলে আরও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তবে বিচার হবে আশা করছি।’

আদালত বলেন, ‘প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষটাকে মারল। একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে আসল না। জনগণকে আপনি কী করবেন? বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। ভিডিও করল, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসল না। এটি জনগণের ব্যর্থতা। তাই এই সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবে কে? দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ প্রতিবাদ করল না। পাঁচজন মানুষ অন্তত এগিয়ে আসলে হয়তো তারা সাহস পেত না। হয়তো তারা (দুর্বৃত্তরা) ক্ষমতাবান, হয়তো মানুষ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’

এ সময় আদালত জানতে চান, মামলা হয়েছে কি না। উপস্থিত এক আইনজীবী বলেন, নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে ওই তথ্য বেলা দুইটায় আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে দিনেদুপুরে স্ত্রীর আয়েশা আক্তারের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত রিফাত শরীফ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে। অভিযোগ ওঠা যুবকদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ফরাজী নামের দুজনের নাম বলতে পেরেছেন নিহত যুবকের বন্ধুরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রিফাত শরীফ গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।