ভিটামিন এ ক্যাপসুল পায়নি রাজবাড়ীর চরাঞ্চলের শিশুরা

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পদ্মার চর অঞ্চলের শতাধিক শিশু ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেতে পারেনি। প্রচারণা না থাকায় ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার বিষয়টি জানত না প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। তবে এর নির্দিষ্ট সংখ্যা কত, তা জানা যায়নি। 

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানা যায়, জেলায় মোট জনসংখ্যা ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৭৮ জন। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৩২৭ জন। ২২ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। 

উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের গ্রাম লস্করদিয়া। উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধ থেকে এর দূরত্ব ৭-৮ কিলোমিটার। বর্ষায় সেখানে যাওয়ার একমাত্র বাহন নৌকা। এখন পানি কম। তাই মোটরসাইকেল আর ঘোড়ার গাড়িতে করে চলাফেরা করা যাচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা জহুরা খাতুন বলেন, জহুরুল ফকির নামে তাঁর ৯ মাসের একটি সন্তান রয়েছে। শুনেছেন, ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ালে অসুখ-বিসুখ কম হয়। কিন্তু ভিটামিন খাওয়ানোর বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। এদিকে কোনো মাইকিংও হয়নি। আশপাশের কেউ জানতেন না। ফলে কেউ খাওয়াতে পারেননি। 

একই এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের তিনটি বাচ্চা। তাদের মধ্যে দুজন যমজ। রাজা ও বাদশা নামে দুই যমজের বয়স ৯ মাস। আর বড় ছেলে আলামিনের বয়স ৪ বছর। এদের কাউকেই ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়নি। তবে ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়টি আগে থেকে জানতে পারলে তিনি অবশ্যই বাচ্চা নিয়ে ক্যাম্পে যেতেন। 

সাদারচর এলাকার আবদুল হালিম ফকির (২৭) বলেন, তাঁদের বাড়ির পাশেই কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে একটি ক্যাম্প করতে পারলে ভালো হয়। বিদ্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ এলাকায় দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এই এলাকা থেকে ক্লিনিকের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। এ কারণে ক্লিনিকের আশপাশের লোকজনই খবর পায়। এদিকে তেমন একটা মাইকিং করা হয় না। তবে এই বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করতে পারলে ভালো হতো। 

কৃষ্ণনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নয়ন বিশ্বাস বলেন, ২২ জুন বেলা দুইটা পর্যন্ত তিনি ক্লিনিকে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে। পরের দিনও যেসব শিশু এসেছে, তাদের অন্য ভিটামিন ক্যাপসুল খাইয়েছেন। গতকালও স্কুলে গিয়ে শিশুদের ক্যাপসুল খাইয়েছেন। 

কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুশীল কুমার রায় বলেন, উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট রয়েছে। ২৯ পদের বিপরীতে রয়েছেন ২১ জন। এর মধ্যে আবার ৫ জন রয়েছেন ছুটিতে। এতে প্রতিটি বাড়িতে ঠিকমতো যাওয়া হয়নি। ফলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সঠিকভাবে করা যায়নি। দুর্গম এলাকা হওয়ায় মাইকিংও অনেক সময় ঠিকঠাক করা যায় না। তবে তাঁরা বাদ পড়া শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁরা সার্বিকভাবে শতকরা প্রায় ৯৯ শতাংশ শিশুকে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাইয়েছেন। তিনি দুপুর পর্যন্ত ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছেন। তবে চর এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়া হয়নি। 

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান বলেন, জেলায় সার্বিকভাবে ক্যাম্পেইন সফল হয়েছে। তবে চরাঞ্চলে বাদ পড়া শিশুদের বিষয়টি তিনি জানেন না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।