যাত্রী বহনের নামে ছিনতাই ও খুন করেন তাঁরা

ফারুক হোসেন (২৭) একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এক সন্ধ্যায় দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় বাস না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য একটি মাইক্রোবাসে ওঠেন। পথে মাইক্রোবাসে থাকা ছিনতাইকারী চক্র তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়।

ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর পাবনার সুজানগর উপজেলার পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের বিরাহিমপুর এলাকায়। ঘটনার পরদিন নিহত ব্যক্তির ভাই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে আমিনপুর থানায় মামলা করেন।

দীর্ঘদিনেও পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে পাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পাবনা জেলা শাখা বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা মাইক্রোবাসে যাত্রী বহনের নামে ছিনতাই ও খুনের কথা স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জেলার সুজানগর উপজেলার ভাটিকয়া গ্রামের মাসুদ শেখ (৩৮) ও সৈয়দপুর গ্রামের আসলাম কাজী (২৮)। তাঁরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গাড়ি যাত্রী বহনের পাশাপাশি ছিনতাই করেন।

পিবিআই কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার দুজনসহ পাঁচ সদস্যের একটি চক্র মাইক্রোবাসে যাত্রী বহনের নামে ছিনতাই, খুনসহ নানা অপকর্ম করছিলেন। ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর তাঁরা পাবনার কাশিনাথপুর মোড় থেকে নিহত ফারুকসহ তিন যাত্রীকে পাবনা জেলা সদরে পৌঁছে দেওয়ার নামে মাইক্রোবাসে তোলেন। পথে চক্রটি দুই যাত্রীর কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেয়। তবে ফারুকের কাছে কোম্পানির টাকা থাকায় তিনি তা দিতে চাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে চক্রের সদস্যরা তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। সেই সঙ্গে ফারুকের লাশটি ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের বিরাহিমপুর এলাকায় ফেলে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পাবনার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটির দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি পিবিআই পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের নির্দেশে একটি দল গঠন করেন। দলের সদস্যরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেন। তবে আসামিরা বারবার স্থান পরিবর্তন করায় তাঁদের ধরতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। একপর্যায়ে ঢাকার মিরপুর থেকে প্রথমে মাসুদ শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাসুদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাইক্রোবাসের চালক আসলাম কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পিবিআই পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পেশা গাড়িচালক। তাঁদের বড় একটি চক্র আছে। গাড়ি চালানোর পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ছিনতাই করেন।

সুপার তরিকুল বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ছিনতাই ও খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে।