হাতিরঝিলের অর্জন ঢাকা পড়ে বালিশ কেলেঙ্কারিতে: গণপূর্তমন্ত্রী

রাজউক সেবা সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। রাজউক অডিটোরিয়াম, ঢাকা, ২৭ জুন। ছবি: সংগৃহীত
রাজউক সেবা সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। রাজউক অডিটোরিয়াম, ঢাকা, ২৭ জুন। ছবি: সংগৃহীত

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘রাজউককে একটা ইমেজপূর্ণ জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি। রাজউকের ভেতরে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকভাবে কাজ করছে। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র অংশের জন্য রাজউককে বদনামের বোঝা কাঁধে নিতে হয়। হাতিরঝিল থেকে শুরু করে সব নির্মাণের অর্জন ঢাকা পড়ে যায়, বালিশ-কেলেঙ্কারির বোঝা আমাদের মাথায় নিতে হয়।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অডিটোরিয়ামে রাজউক সেবা সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা রাজউককে জনবান্ধব, স্বচ্ছ, দীর্ঘসূত্রতামুক্ত একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারব। রাজউককে আমরা বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা ভাবছি। এত বড় ঢাকায় একটি রাজউকে বসে সবকিছু পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজউকের সব জোনকে শক্তিশালী করতে চাই। স্তরভিত্তিক পরিসর বাড়ার কারণে রাজউকের বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে। এটা তিনি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন। অদূর ভবিষ্যতে রাজউকের কেন্দ্রিকতা বিকেন্দ্রীকতায় পরিণত হবে, যাতে মানুষ সেবা পেতে পারে।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘রাজউককে আমরা একটা ইমেজপূর্ণ জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি। রাজউকের ভেতরে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকভাবে কাজ করছে, কিন্তু একটি ক্ষুদ্র অংশের জন্য রাজউককে বদনামের বোঝা কাঁধে নিতে হয়। দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল থেকে শুরু করে সব নির্মাণের অর্জন ঢাকা পড়ে যায় যখনই বালিশ-কেলেঙ্কারির বোঝা আমাদের মাথায় নিতে হয়। যাঁদের ভুল আছে, তাঁদের শোধরানোর জন্য বারবার বলছি। যাঁরা শোধরাবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে মন্ত্রণালয়, রাজউক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে শুরু করে একটা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী অন্যায়ভাবে হয়রানি হোক, এটা আমি চাই না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘রাজউকের ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের সম্পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ক্ষুদ্র অংশকে অনুরোধ করছি সবাই মিলে ভালো হয়ে যান। ভালো না হলে আপনাদের রাজউকে প্রয়োজন আছে কি না, ভেবে দেখতে হবে। এত পরিশ্রমের রাজউক দু-একজনের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে, বদনাম কাঁধে নেবে, এটা হতে পারে না।’

সাধারণ মানুষদের উদ্দেশে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘রাজউককে সাহায্য করুন। গতানুগতিকভাবে রাজউকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে যেভাবে কাজ করছেন, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। রাজউকের সেবাটাও দেখুন। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা কাউকে ছাড় দিতে চাই না। দুর্নীতি কোনোভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।’

সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি প্রতিবেদন করার পূর্বে একটু খতিয়ে দেখুন, রাজউক তার নৈমিত্তিক কাজের বাইরে গিয়ে, গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে আগের চেয়ে গতিশীলতা নিয়ে কাজ করছে কি না। কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে রাজউকের চেয়ারম্যান, সদস্য এমনকি প্রয়োজনে আমাকে জিজ্ঞেস করুন। আমরা কৈফিয়ত দেব। আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে প্রতিবেদন করলে ভালো হয়। আমি চাই না আমার বিরুদ্ধে, মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে, রাজউকের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবেদন করবেন না। তবে এটা চাই প্রতিবেদনে যেন সারবস্তু, তথ্য ও ভিত্তি থাকে। অনিয়ম হলে অবশ্যই প্রতিবেদন করবেন, ব্যবস্থা নেব।’

সভাপতির বক্তব্যে রাজউকের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বলেন, ‘রাজউকের জনবল কম থাকা সত্ত্বেও সেবা প্রদান কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেগবান হয়েছে। স্বল্প সময়ে কোনো রকমের হয়রানি ছাড়াই সেবাগ্রহীতারা যাতে সেবা পেতে পারেন, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধান অতিথি সমাপনী অনুষ্ঠানের পূর্বে বিভিন্ন সেবা স্টল ঘুরে দেখেন এবং বিভিন্ন সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে সেবা গ্রহণ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।

উল্লেখ্য, সেবাগ্রহীতাদের সহজে ও দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও রাজউকে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৩-২৭ জুন ৫ দিনব্যাপী পালন করা হয়েছে রাজউক সেবা সপ্তাহ ২০১৯।

সেবা সপ্তাহ চলাকালে রাজউকের বিভিন্ন শাখা থেকে সেবাগ্রহীতার ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, ভবন নির্মাণ অনুমোদন, রাজউকের প্লট/ফ্ল্যাটের নামজারি, আমমোক্তার অনুমোদন, নকশা অনুমোদন প্রভৃতি সেবা প্রদান করা হয়। সেবাগ্রহীতারা সেবা উন্নয়নে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। সেবা সপ্তাহে রাজউকের নগর-পরিকল্পনা শাখা থেকে ২৩০টি ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে ১৮৮টি ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদন এবং এস্টেট ও ভূমি শাখা থেকে ৬৯টি নামজারি, ৩২টি প্লটের দখল হস্তান্তর, ৮১টি প্লটের আম-মোক্তার/হস্তান্তর/লিজ ডিট/হেবা, ০৭টি নকশা অনুমোদনের ছাড়পত্র, ১০টি ঋণ গ্রহণের অনাপত্তিপত্র, ৩২টি হাতিরঝিল ফ্ল্যাটের সাময়িক বরাদ্দপত্র, ১৭৫টি উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি জালাল আহমেদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি মো. আবদুস সবুর। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আমজাদ হোসেন খান। তথ্যসূত্র: প্রেস বিজ্ঞপ্তি