২০২০ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের আশা

ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো

আগামীকাল শনিবার ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসছে পদ্মা সেতুর ১৪ তম স্প্যান। এই স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ২১শ মিটার দৃশ্যমান হবে। ইতিমধ্যে সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পাইল ডাইভিং শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ৩-সি নম্বর ১৪ তম স্প্যানটি বসানোর নির্ধারিত দিন ছিল। এ জন্য ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান ই’দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু পিয়ারের কাছে ডুবো চরে আটকে যায় ক্রেনটি। এর পর নদী খননের কাজ শুরু হয়ে। শনিবার সকাল পর্যন্ত নদী খননের কাজ চলার পর সকাল ১০টার পর স্প্যানটি ওঠানোর কার্যক্রম শুরু হবে। এ নিয়ে চলতি বছরের ছয় মাস আটটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মূল বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সেতুর পাইল ডাইভিং। এটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন তো প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত চলছে। জাজিরায় অনেক স্প্যান বসে গেছে। মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দূরত্ব কমে এসেছে। তাই কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দুই একদিনের মধ্যেই একটি করে স্প্যান পিয়ারের ওপর বসানো সম্ভব। ১৩ টি পিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হলে আশা করা যায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন করতে পারবে।

গত ২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারের ওপর ১৩তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ১ হাজার ৯৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়। এর ৩৫ দিন পর ১৪ তম স্প্যানটি বসানো হবে।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় গত বছরের ২৯ জুন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। ২০১৮ শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারের ওপর একটি স্প্যান বসানো হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের সপ্তম স্প্যান বসে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর গত ২২ মার্চ নবম স্প্যান বসে। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১০ম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু ১ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যে রূপ নেয়। ১৩ দিন পর ২৩ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় ১১তম স্প্যান। ৬ মে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের পর ১২তম স্প্যান বসানো হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ার পর সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৯০টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। বাকি চারটি পাইল বসানোর কাজ এ মাসেই সম্পন্ন হবে। তা ছাড়া ৪১ পিয়ারের মধ্যে ২৯টি পিয়ার নির্মাণ হয়ে গেছে। বাকি ১২টি পিয়ার নির্মাণ এ বছরই হয়ে যাবে। মাওয়ার কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও ১০টি স্প্যান প্রস্তুত হয়ে আছে। ৯টি স্প্যানের অংশ চীনে তৈরি হয়ে গেছে। দুটি স্প্যানের অংশ আগামী মাসের মধ্যে চলে আসবে। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আসার পর প্রতি মাসে একটি করে স্প্যান জোড়া দেওয়া হয়।

ডাঙার অংশ ধরলে পদ্মা সেতু প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পুরো সেতুতে মোট পিয়ারের সংখ্যা ৪২। প্রতিটি পিয়ারে রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব ১৫০ মিটার।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

৪১টি স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। তবে কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিয়ারের মধ্যে ১টি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা হয়।