সংসদে কথার লড়াই নয়, দরকার রাজপথের আন্দোলন

নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা। শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তন, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা, ২৮ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা। শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তন, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা, ২৮ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

নাগরিক ঐক্যের এক আলোচনা সভায় বক্তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে কোনো আন্দোলন গড়ে না ওঠা এবং কোনো কর্মসূচিও দিতে না পারায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সমালেচনা করেছেন। তাঁরা সংসদে কথার লড়াই না করে রাজপথে আন্দোলন করতে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টে নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘লড়াই যদি করতে হয়, লড়াইয়ের মতো লড়াই করতে হবে। আমি মনে করি আমরা ঠিকমতো লড়াই করছিলাম যে রকম করে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম। এখনো একসঙ্গে চলতে চাই। পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই চলতে চাই। কিন্তু মানুষ প্রশ্ন করছে, ৩০ তারিখের পর ৬ মাস পার হয়ে গেছে, একটাও কর্মসূচি দিতে পারলেন না কেন?’ তিনি বলেন, এই ৬ মাস কত মাসে ঠেকবে কে জানে?

৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতির’ নির্বাচন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মান্না। সে নির্বাচনের পর হরতালের মতো কোনো কর্মসূচি না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কেন ৩০ তারিখ বিকেল বেলা চার/পাঁচ দিনের জন্য হরতাল দিতে পারলেন না?’ মান্না বলেন, হরতাল হলে নির্যাতন, হামলা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন অনেকে কিন্তু এর উল্টোটাও ঘটতে পারত। সারা বিশ্বের মানুষ জানত অন্যায়ের পথে এ দেশের মানুষ পথে নেমেছিল।

আলোচনা সভায় (বাঁ থেকে) নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাঈদ। ঢাকা, ২৮ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
আলোচনা সভায় (বাঁ থেকে) নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাঈদ। ঢাকা, ২৮ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

সংসদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাঁরা গেছেন তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হয় না উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘সংসদে দাঁড়িয়ে কথার লড়াইয়ের আগে রাজপথের লড়াই নিশ্চিত করেন। সংসদের লড়াই কোনো লড়াই নয়। রাজপথে লড়াই করার জন্য নিজেদের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত হতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্য গড়তে তাঁর দল শুরু থেকে কাজ করছে। এখনো তাঁরা ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিন্তার মধ্যে ভুল ছিল বলব না। কিন্তু আমরা যাদের সঙ্গে সম্পর্ক করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, তারা মনে মনে আগেই তাদের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। নতুন করে ভাবতে হবে।’

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে মান্না গরিব মারার বাজেট বলে সমালোচনা করেন। এ ছাড়া বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনার নিন্দা জানান মান্না। তিনি বলেন, দেশে কোনো বিচার নেই, আইনের শাসন নেই, নির্বাচন নেই। দেশে কেবল ডাকাতি আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সবাই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দেশে যে নির্বাচন হয়েছে, তারপর তাঁর ধারণা ছিল ১ জানুয়ারি থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বে। কিন্তু কেউ রাস্তায় নামেনি। ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব কেউই নামেননি। তিনি নিজেও নামেননি বলে জানান।

সুজন সভাপতি বলেন, পরিবর্তন চাইলে রাস্তায় নামতে হবে। গণ–আন্দোলন ছাড়া এর পরিবর্তন হবে না। গণ–আন্দোলন করতে হলে যে নেতৃত্ব দরকার, সেটাকে সংগঠিত শক্তিশালী উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম বলেন, এবারের সংসদ নির্বাচনের পরে জনগণের কাছে তাঁরা কোনো সঠিক বার্তা দিতে পারেননি। তিনি ছাড়াও নাগরিক ঐক্যের জেলা পর্যায়ের দুজন নেতা তাঁদের বক্তৃতায়ও ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকার সমালোচনা করেন।

শীর্ষ ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা এবং সাংসদদের সম্পদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ। বিরোধীদের সংসদে কথা বলতে গেলে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় আরও অংশ নেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির নেতা আকবর খান, নাগরিক ঐক্যের জাহেদুর রহমান প্রমুখ।