বাসে বাসে ধাক্কা, হাত বিচ্ছিন্ন তরুণের

এক বাসের সঙ্গে আরেক বাসের ধাক্কায় হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ফিরোজ সরদারের। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাজশাহী, ২৮ জুন। ছবি: প্রথম আলো
এক বাসের সঙ্গে আরেক বাসের ধাক্কায় হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ফিরোজ সরদারের। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাজশাহী, ২৮ জুন। ছবি: প্রথম আলো

বেপরোয়া গতির একটি বাসের সঙ্গে আরেক বাসের ধাক্কায় এক তরুণের ডান কনুইয়ের ওপর থেকে হাত কাটা পড়েছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার সামনে শুক্রবার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। সড়কে পড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন হাতটি উদ্ধার করে পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে নিলেও কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাতটি আর জোড়া দেওয়া সম্ভব নয়।

রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের অর্থ এখনো পায়নি রাজীবের পরিবার। এরই মধ্যে একই ধরনের ঘটনা ঘটল এবার রাজশাহীতে।

হাত হারানো ফিরোজ সরদার (২৫) রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার মাহফুজার রহমানের ছেলে।

পুলিশ, ফিরোজের পরিচিতজন ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, পরীক্ষার ছুটিতে ফিরোজ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বাড়ি গিয়েছিলেন। শুক্রবার পরীক্ষা দিয়েই তিনি রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হন। রোববার তাঁর কলেজে পরীক্ষা রয়েছে। এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে ২২ জুন। পথে দুই বাসের ধাক্কায় তাঁর হাত কাটা পড়ে। এরপর ফিরোজকে নিয়ে বাস চলে যায় রাজশাহী বাস টার্মিনালে। সড়কে কাটা হাত পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন কাটাখালী থানার পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত হাতটি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ততক্ষণে ফিরোজকেও ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বাসে ফিরোজের সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহপাঠী বীরেশ্বর চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি বলেন, তাঁর বাড়িও বগুড়ায়। তিনিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বগুড়া থেকে রাজশাহীগামী বাসে ওঠেন। আর নন্দীগ্রাম থেকে ফিরোজও একই বাসে ওঠেন। বাসে যাত্রী বেশি থাকায় ফিরোজ সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে পেছনের দিকে সিট পেয়ে সেখানে বসেন তিনি। পবার কাটাখালী পৌর এলাকায় বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। হঠাৎ আরেকটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এটির। বিকট শব্দে সবাই চমকে ওঠেন। এরপর বাসের মধ্যে চিৎকার শুনতে পান বীরেশ্বর। সবাই বলছিলেন, হাত পড়ে গেছে। কার হাত, তা তখনো বুঝতে পারেননি তিনি। বাসটি রাজশাহী নগরের তালাইমারীতে থামে। তখন দেখেন, ফিরোজকে ধরাধরি করে নামানো হচ্ছে। তাঁর ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে কাটা পড়েছে। সেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

রাজশাহী নগরের কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে এলাকাবাসীর মাধ্যমে তিনি খবর পান যে কাটাখালী পৌরসভার সামনে রাজশাহী-নাটোর সড়কে একটি কাটা পড়া হাত পড়ে আছে। এ খবর পেয়ে তিনি পুলিশ পাঠান। ওই পুলিশ সদস্যরা হাতটি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।


থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা হাত নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ফিরোজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক তাঁদের জানান, হাতটি জোড়া দেওয়া সম্ভব হবে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, ফিরোজের অস্ত্রোপচারের পর বিচ্ছিন্ন হাত ছাড়াই ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে।