আত্রাইয়ে যত্রতত্র গ্যাসের সিলিন্ডার, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

গ্যাস সিলিন্ডার বিধি লঙ্ঘন করে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। ওই বিধিতে আচ্ছাদিত এলাকায় বিক্রি করার নির্দেশ থাকলেও রাস্তার পাশে, বাজার এলাকা ও সড়কের মোড়ে তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। এভাবে বিক্রি করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু আত্রাই উপজেলার অনেক ব্যবসায়ীই সেই লাইসেন্স নেননি। উপরন্ত অনেকের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। এসব দোকানে নেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিকারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

এই বিষয়ে আত্রাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা নিতাই ঘোষ বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পরামর্শে এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ৫২টি দোকান পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে ১৪টির বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স পাওয়া গেছে। বাকি ৩৮টি দোকানে লাইসেন্স নেই। অবৈধ ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি। বিস্ফোরক পরিদপ্তর বিস্ফোরক লাইসেন্স দিয়ে থাকে। সহজেই এ লাইসেন্স পাওয়া গেলেও অনেকেই তা নেন না।’

আত্রাই ইউএনও মো. ছানাউল ইসলাম তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অবৈধভাবে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবসা বন্ধে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কয়েকজন ব্যবসায়ীর জরিমানা করা হয়েছে। আগামী মাসে ব্যবসায়ী ও তাঁদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে যেসব ব্যবসায়ীর বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নেই, সেসব ব্যবসায়ীর কাছে ওই পরিদপ্তরের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার নোটিশ পাঠানো হবে। কেউ তা না করলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে খোলা আকাশের নিচে অবাধে বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি উপজেলার ভবানীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ভবানীপুর উচ্চবিদ্যালয় ও ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫০ থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে কয়েকটি দোকানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে কোনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। অথচ নিয়মানুযায়ী যেসব দোকানে ৪০ থেকে ৫০টি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেসব দোকানে একটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখতে হবে।

সরেজমিনে উপজেলার ভবানীপুর বাজার, আত্রাই স্টেশন বাজার, নওদুলি বাজার, সাহেবগঞ্জ বাজার, বান্দাইখাড়া বাজার,শাহাগোলা স্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছোট দোকান, খুচরা বাজারের দোকান, রাস্তার পাশের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। এসব দোকানদার বেশির ভাগই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নেননি। তা ছাড়া তদারকির অভাবে ঝুঁকি জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক দোকানে নানা ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও চা ও পানের দোকান ছাড়াও হার্ডওয়্যার, সিমেন্ট, মনোহরি ও মুদি দোকানেও এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন দোকানমালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী অজিত সাহা বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন থেকে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছি। আমাদের মাত্র কয়েকজনের লাইসেন্স আছে। কিন্তু বাকিরা লাইসেন্স না নিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করে যাচ্ছে।’