যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন, আটক ৫

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে কলি বেগম (২৪) নামের এক গৃহবধূকে হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজ শনিবার ভোরে ওই গৃহবধূর স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ (২৮) পাঁচজনকে আটক করেছে।

গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম ছাড়া অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের বাবা আবদুল হামিদ, মা ফাতেমা বেগম, বড় ভাই আলমগীর হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রী রুমা আক্তার। তাঁদের বাড়ি কলমাকান্দার বেলতলী চরপাড়া গ্রামে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষ দিকে বেলতলী চরপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানা তেলিপাড়া এলাকার খায়রুল আলমের মেয়ে কলি বেগমের মুঠোফোনে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের দেড় বছরের একটি সন্তান রয়েছে।

বিয়ের পর থেকে জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন কলি আক্তারকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। কলি বিভিন্ন সময় তাঁর বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতেন। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন আবার ৫০ হাজার টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে কলি অস্বীকৃতি জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই টাকার জন্য কলির স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাশুর ও তাঁর স্ত্রী মিলে কলিকে মারধর করেন। একপর্যায়ে কলির হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে ঘরে আটকে নির্যাতন শুরু করেন। গতকাল সকালে কলি কৌশলে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে তাঁর মায়ের মুঠোফোনে খবর পাঠান। ওই দিন সন্ধ্যায় কলির বাবার বাড়ির লোকজন সিধলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হাজির হয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান।

পরে তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কলিকে ওই ঘর থেকে শিকল বাঁধা ও অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। তাঁকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ওই গ্রামের অন্য একটি বাড়ি থেকে স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলম, শ্বশুর আবদুল হামিদ, শাশুড়ি ফাতেমা বেগম, ভাশুর আলমগীর হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুমা আক্তারকে পুলিশ আটক করে।

এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ আজ দুপুরে কলমাকান্দা থানায় যৌতুকসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখায়।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ওই পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল আল মামুন বলেন, ওই গৃহবধূর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে তাঁর স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।