নিয়োগ-বাণিজ্যের মূল হোতাকে বহিষ্কারের দাবি ছাত্রলীগের

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্যের মূল হোতা সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানকে বহিষ্কার ও তাঁর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁরা ক্যাম্পাসে দুর্নীতিবিরোধী মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের এ দাবির কথা জানান।

গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে আর্থিক বাণিজ্যের একটি অডিও আসে। এতে নিয়োগের ব্যাপারে একজন আবেদনকারীর সঙ্গে বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আবদুর রহিমের কথোপকথন পাওয়া যায়। প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় ওই দুই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। তবে অডিওতে সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানের নাম চলে এসেছে। মাহবুবরসহ নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গতকাল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই মিছিল বের করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে দলীয় টেন্ট থেকে ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শাহিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানারনেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। এ সময় মিছিল থেকে ‘দুর্নীতিবাজদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও; দুর্নীতিবাজদের বিচার চাই’সহ বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক স্লোগান দিতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি প্রশাসন ভবন ও ডায়েনা চত্বর হয়ে অনুষদ ভবনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্য হারুন উর রশিদ আসকারীর সঙ্গে দেখা করে। এ সময় তাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্য ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ছাত্রলীগ নেতারা উপাচার্যের কাছে জানতে চান, নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও মূল হোতা সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগ দাবি করে, তাঁর (মাহবুবর) বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এই ঘটনা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষক সমাজকে নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গনের প্রতিটি সেক্টরকেই কলঙ্কিত করেছে।

শিক্ষক সমিতির আরও তিন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগে খুবই শক্তিশালী একটি চক্র কাজ করে, যাদের নাম বিভিন্ন মহলে ঘুরেফিরে চলে আসে। তারাই এবং তাদের মদদদাতারা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের নাম জেনেও প্রশাসন শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কেন নেয় না, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত।

জুয়েল রানা বলেন, নিয়োগ-বাণিজ্যের কথোপকথনে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের প্রত্যেককে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। মূল হোতা সাবেক প্রক্টর মাহবুবর রহমানকে কেন বহিষ্কার করা হলো না, সে ব্যাপারে উপাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি (উপাচার্য) আশ্বস্ত করেছেন, এর সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত, তাঁদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।

ছাত্রলীগের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ তাদের দাবির যেকোনো তথ্যপ্রমাণ দিক। খুব সহজ ও স্পষ্ট বক্তব্য, আমার কারণে তাদের (ছাত্রলীগ) কমিটি স্থগিত হয়েছিল। তাদের (ছাত্রলীগ নেতাদের) তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে।’

উপাচার্য মো. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, বোঝাই যাচ্ছে চক্র একটা আছে। একই লোক (শিক্ষক) যখন পুনরাবৃত্তি (নিয়োগ-বাণিজ্যে অভিযুক্ত) করেন, নিশ্চয়ই তিনি কোনো চক্রের মাধ্যমে করতে পারেন। সেটিই এখন বের করা হবে।