বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধ আট গ্রাম

বৃষ্টি হলেই গ্রামে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা পার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার নাজিরের গাঁও গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
বৃষ্টি হলেই গ্রামে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা পার হচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার নাজিরের গাঁও গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট সদর উপজেলার তেমুখী-বাদাঘাট সড়কে পানিপ্রবাহের জন্য কোনো ড্রেনেজব্যবস্থা (নর্দমা) গড়ে ওঠেনি। একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলে এই সড়কের পার্শ্ববর্তী আটটি গ্রামে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একবার জলাবদ্ধতা দেখা দিলে পানি সরতে কয়েক দিন সময় নেয়। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুম এলেই স্থানীয় লোকজনের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, কয়েক দশক আগেও সড়কের উভয় অংশে খাল ছিল। বৃষ্টি হলে সেই খাল দিয়েই পানিপ্রবাহ হতো। এখন সেসব খালে দোকানপাট ও আবাসন গড়ে ওঠায় পানিপ্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত তেমুখী, কুমারগাঁও, কালীগাঁও, নাজিরেরগাঁও, নুয়া খুরুমখলা, মইয়ারচর, চাতলিবন্দ, সোনাতলা গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সামান্য বৃষ্টিতে এসব গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমির উদ্দিন আহমদ বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আটটি গ্রামেই তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে গ্রামগুলোর অধিকাংশ ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষত স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটি নিরসনে সড়কের সোনাতলা-নলকূট পর্যন্ত অন্তত আধা কিলোমিটার অংশে একটি ড্রেনেজব্যবস্থা চালু করলে সমস্যার পুরোটাই সমাধান হয়ে যেত। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার এ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বেশ কিছু বাসাবাড়ির ভেতরে পানি রয়েছে। গ্রামগুলোর একাধিক রাস্তা ডুবে রয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে লোকজন পানি মাড়িয়ে এপার-ওপার হচ্ছেন। নাজিরেরগাঁও ও মইয়ারচর গ্রামে প্রবেশের মূল রাস্তাটি পানিতে ডুবে রয়েছে। সেই দুটি রাস্তায় কচুরিপানা ভাসছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে মাছ ধরার জন্য জাল পেতেছেন। পয়োনালার পানিও রাস্তায় চলে আসায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

নাজিরেরগাঁও গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি সিরাজ উদ্দিন বলেন, তাঁর বাড়িতে হাঁটুপানি দেখা দিয়েছে। তেমুখী-বাদাঘাট সড়কে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। এতে বসবাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয় জনসাধারণকে। একই গ্রামের বাসিন্দা ও ভুসিমালের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, অন্তত ২০ বছর ধরে জলাবদ্ধতার এমন সমস্যা চলছে। অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই জনদুর্ভোগ নিরসনে কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখছেন না।

নুয়া খুরুমখলা গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, গ্রামের ভেতরে কিছু ড্রেনেজব্যবস্থা থাকলেও পার্শ্ববর্তী মূল সড়কে তা নেই। এর ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই পানি গড়িয়ে গ্রামগুলোতে যাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। একবার জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও পানি ধীরগতিতে নামে। একই গ্রামের এক গৃহিণী জানান, বাড়িতে পানি ওঠায় রান্নাঘরও ডুবে যায়। তাই রান্নাবান্না করা যায় না। এ সময়টাতে শুকনা খাবার খেয়ে কোনো রকমে দিন অতিবাহিত করতে হয়।

সোনাতলা গ্রামের দুজন বাসিন্দা জানান, নগরের ঠিক পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় এসব গ্রামের জায়গার দাম দিন দিন হু হু করে বাড়ছে। তবে বৃষ্টির পানিতে প্রায়ই জলাবদ্ধতা লেগে থাকায় অনেকেই এসব এলাকায় বাসাবাড়ি তৈরিতে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আসছেন না। এসব এলাকার কৃষিজমিতে বছরে দুবার ফসল ফলান কৃষক। অথচ জলাবদ্ধতার কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ লাঘবের স্বার্থেই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ড্রেনেজব্যবস্থার অভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার বিষয়টিতে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’