নান্দাইলে সংযোগ সড়ক ছাড়াই আছে দাঁড়িয়ে সেতুটি

সংযোগ সড়কবিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি। নান্দাইল পৌরসভার কান্দাপাড়া মহল্লায়।  ছবি: প্রথম আলো
সংযোগ সড়কবিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি। নান্দাইল পৌরসভার কান্দাপাড়া মহল্লায়। ছবি: প্রথম আলো

সংযোগ সড়ক না থাকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের একটি সেতু অনেক বছর ধরে ব্যবহার করতে পারছেন না পথচারীরা। দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত পড়ে থাকায় সেতুর বিভিন্ন অংশ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। রেলিংয়ের কিছু অংশও ভেঙে গেছে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নান্দাইল পৌরসভার শেষ সীমানা কান্দাপাড়া মহল্লা। সেই মহল্লার সঙ্গে নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনাসহ কয়েকটি গ্রামকে যুক্ত করার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুর আশপাশে নির্মাণকালীন কোনো ফলক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের স্মৃতির ওপর ভর করে এবং কেউ কেউ নিজের সন্তানের বয়সের সঙ্গে মিলিয়ে সেতুটি ১৯৯৭ সালে চিমনি খালের ওপর নির্মিত হয়েছে বলে জানান।
কান্দাপাড়া মহল্লার রাহেলা আক্তার (৪০) বলেন, তিনি বউ হয়ে আসার পর থেকে সেতুটি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন। মানুষের কাজে না লাগলে সেতুর কী দরকার।
ভাটি কান্দাপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান (৪৮) বলেন, বিলে পানি থাকায় এখানে টেকসই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা দরকার।
খোঁজ নিয়ে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার
মো. এনামুল কাদিরের সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁর ভাষ্য, অনেক আগের কথা। সব তথ্য তাঁর মনে নেই।
তবে সেতুটি তিনি নির্মাণ করেছেন। নির্মাণকারী
কর্তৃপক্ষ ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে নান্দাইল পৌরসভার নতুন মসজিদ এলাকা। ওই এলাকা থেকে পিচঢালা একটি সড়ক সরাসরি চলে গেছে কান্দাপাড়া মহল্লায়। ওই সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে সেতুটি দেখা যায়। সেতুর দুই প্রান্তে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। সেতুতে ওঠার জন্য মহল্লার লোকজন বাঁশের মই লাগিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন জমিজমা দেখাশোনা করার জন্য মই বেয়ে ওপরে উঠে সেতু পার হন। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের মেরাকোনা গ্রামের অংশে রয়েছে এ ধরনের আরেকটি মই। অন্যদিকে নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটি বিলপাড় গ্রাম থেকে তাকালে মনে হয় সেতুটি খালের পানিতে ভেসে রয়েছে।
কান্দাপাড়া মহল্লার প্রায় ১০ জন ও মেরাকোনা গ্রামের ৮ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে বহুমুখী যোগাযোগসুবিধা পাবে কয়েক গ্রামের মানুষ। শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনাসহ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা ঘোরাপথে না গিয়ে সরাসরি সমূর্ত্তজাহান মহিলা কলেজ ও পৌরসভায় ঢুকতে পারবে। এখন ওই বাসিন্দাদের নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়ক ও হেমগঞ্জ বাজার ঘুরে আসতে হচ্ছে।
নান্দাইলের সমূর্ত্তজাহান মহিলা কলেজের অফিস সহায়ক তারা মিয়ার বাড়ি মেরাকোনা গ্রামে। তিনি বলেন, সেতুর ওপরে উঠতে গিয়ে অনেক নারীকে নিচে পড়ে আহত হতে দেখেছেন তিনি।
শেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, সংযোগ সড়ক থাকলে সেতুর দক্ষিণ পাশের মানুষের সুবিধা হতো। তবে, এ ধরনের সড়ক নির্মাণ করার মতো তহবিল ইউপির
হাতে নেই।
নান্দাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদের গ্রামের বাড়ি শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামে। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নান্দাইল উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের মিয়া বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের একটি প্রস্তাব অনেক আগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব পাস হয়নি। অন্যদিকে এ ধরনের সড়ক নির্মাণে খরচ বেশি হওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে আবার প্রস্তাব পাঠানো হবে।