নিজ দলের কর্মীদের হাতে নির্মম পিটুনিতে হাসপাতালে তিনি

চট্টগ্রামে যুবলীগের কর্মী মো. মহসিনকে (২৬) নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এই দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
চট্টগ্রামে যুবলীগের কর্মী মো. মহসিনকে (২৬) নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এই দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

চট্টগ্রামে যুবলীগের কর্মী মো. মহসিনকে (২৬) নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকার এন ব্লকে এ ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সকাল থেকে মহসিনকে পেটানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে আজ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা সবাই যুবলীগের কর্মী। অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হাতে হামলার শিকার হন মহসিন। ঘটনার আগের দিন গত শনিবার তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বিরুদ্ধে মারামারির তিনটি মামলা আছে। তিনি নগরের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন মো. সাজু, মো. তারেক, বেলাল হোসেন, মো. মিরাজ ও মো. মাসুদ। তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জসীমের অনুসারী বলে জানা গেছে।

ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, একটি গলির মুখে যুবলীগের কর্মী মহসিনকে অতর্কিত এসে মারধর শুরু করে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল। তাদের কাছ থেকে মহসিন পালানোর চেষ্টা করলেও চারপাশ থেকে রড ও লাঠি দিয়ে তাঁকে পেটানো অব্যাহত থাকে। মারধর থেকে বাঁচতে মহসিন একজনের পা ধরে রাখেন। ওই যুবকের নাম চৌধুরী জুয়েল। পা ধরেও পিটুনি থেকে রক্ষা পাননি মহসিন। পরে মৃত ভেবে তাঁকে রেখে চলে যান হামলাকারীরা। ভিডিও ফুটেজ দেখে তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, ফারহান ও খোকন নামে আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জসীম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মহসিনের লোকেরাই তাঁকে মারধর করেছেন।

নগরের আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এক যুবককে নির্দয়ভাবে পেটানোর ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে এই মারামারির ঘটনা। গ্রেপ্তার আসামি সাজুর কাছ থেকে ঘটনার সময় হাতে থাকা একটি লম্বা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এর আগে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরের সদরঘাট থানার নালাপাড়া এলাকায় নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। ওই দিনই হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নগরের লালখান বাজার এলাকার এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই খুনের ঘটনা বলে গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। এখনো সেই বড়ভাইকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

সুদীপ্তের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, ছেলে হারানোর ঘটনায় বিচার না হলে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।