ডিআইজি মিজান বললেন, 'হান্ড্রেড পারসেন্ট ভালো আছি'

ডিআইজি মিজানুর রহমানকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসাদুজ্জামান
ডিআইজি মিজানুর রহমানকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আসাদুজ্জামান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। তবে আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতে এসে আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি মিজান বলেন, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ভালো আছি। যা সত্য তাই বলেছি।’

বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের জিপে ডিআইজি মিজানকে আদালতে আনা হয়। গাড়ি থেকে বের করে মিজানকে সরাসরি ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতের এজলাসে নেওয়া হয়। জনাকীর্ণ আদালতের পেছনের বেঞ্চে মিজান বসেন। পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পদস্থ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তখন আদালতে অন্য মামলার শুনানি চলছিল। সাড়ে ১১ টার দিকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আদালত কক্ষে আসেন। ওই আইনজীবী মিজানুর রহমানকে বলেন, ‘কেমন আছেন মিজান সাহেব?’ জবাবে মিজান হাসিমুখে বলেন, ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ভালো আছি। যা সত্য তাই বলেছি।' এর কিছুক্ষণ পর মিজানুরের মামলার শুনানি হয়।

ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতকে জানান, দুদকের মামলায় মিজান গতকাল সোমবার আগাম জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে যান। আদালত তাঁর জামিন নাকচ করেন। মিজানকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, মিজানকে আদালতে আনে পুলিশ। ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন এহসানুল হক। আদালত অনুমতি দিলে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে ওকালতনামা দেওয়া হয় মিজানের কাছে। ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন মিজান। এরপর মিজানের জামিনের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন তাঁর আইনজীবী এহসানুল হক।

আদালতকে তিনি বলেন, আদালতের সামনে এখন দুটি কাগজ আছে। এক. মিজানুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারের কপি। আর দুদকের দেওয়া মামলার ফরোয়ার্ডিং (প্রতিবেদন)। আসামি মিজানুরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা বিশ্বাস করার মতো কোনো কাগজ আদালতের সামনে নেই। তদন্ত চলমান। এহসানুল হক সমাজী আদালতকে আরও বলেন, যে আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে তাতে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কোনো বাধা নেই।

তবে ডিআইজি মিজানের জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আদালতকে তিনি বলেন, ডিআইজি মিজানের মামলাটি বিশেষ আইনের মামলা। এই অপরাধ অজামিনযোগ্য। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন এবং সম্পদ হস্তান্তরের অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয়।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে আদালত কক্ষ থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে মিজানকে পুলিশের জিপে করে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।

মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। গত ২৫ জুন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আরও পড়ুন