কী আছে তিনটি কনটেইনারে?

মেঘনা নদীতে গত তিন দিন ধরে মনপুরাবাসি তিনটি কনটেইনার তিনটি ভাসতে দেখছেন। জেলেরা গতকাল বুধবার জোয়ারের সময় একটি কনটেইনার নদীর তীরে বেঁধে রেখেছেন। ছবি : প্রথম আলো
মেঘনা নদীতে গত তিন দিন ধরে মনপুরাবাসি তিনটি কনটেইনার তিনটি ভাসতে দেখছেন। জেলেরা গতকাল বুধবার জোয়ারের সময় একটি কনটেইনার নদীর তীরে বেঁধে রেখেছেন। ছবি : প্রথম আলো

ভোলার মনপুরা উপজেলার মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মেঘনা নদীতে ভাসা তিন কনটেইনার। কী আছে কন্টেইনারগুলোর মধ্যে! কেউ মনে করছেন, এগুলোর ভেতরে আছে মানুষের লাশ! কারও ধারণা, বিষাক্ত কিছু! কেউবা ভাবছেন, তিনটি কন্টেইনারে আছে বর্জ্য, অথবা দামি কোনো পণ্য! এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। আলোচনার ঝড় উঠছে। গত তিন দিন ধরে(সোমবার দিবাগত রাত থেকে) মনপুরার অনেকেই কনটেইনার তিনটি ভাসতে দেখছেন। কিন্তু কেউ উদ্ধার করছেন না। অতি উৎসাহী কিছু জেলে গতকাল বুধবার জোয়ারের সময় একটি কনটেইনার নদীর তীরে বেঁধে রেখেছে। তবে এসব কনটেইনার আজ বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।

মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফোরকান আলী বলেন, গত সোমবার রাতে স্থানীয় জেলেরা নদীতে কনটেইনার তিনটি ভাসতে দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। তারপরে ওপরে জানিয়েছেন।

তিনটি কনটেইনার নদীতে ভেসে থাকার কথা স্বীকার করে ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথের চলাচল করা জাহাজ থেকে কনটেইনারগুলো মেঘনা নদীতে পড়ে গেছে। কেউ ইচ্ছে করেও ফেলতে পারে। এসব কনটেইনার উদ্ধারের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব কনটেইনারের মালিকদের কাছে থেকে উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, একটি কনটেইনার মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ মৎস্য ঘাটের পশ্চিম পাশে ভাসছে। অপর দুটি ভাসছে উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের ঢালচরের উত্তর-পূর্ব দিকে। জেলেরা বলছেন, তাঁরা হাতিয়ার দিকেও কয়েকটি কনটেইনার ভাসতে দেখেছে। ভাসতে ভাসতে কনটেইনারগুলো কখনো নদীর তীরে ভেসে আসে, আবার মাঝখানে চলে যায়। তবে রামনেওয়াজ মৎস্যঘাটের পশ্চিম পাশের কনটেইনারটি জোয়ারের সময় তীরে ভেসে আসলে স্থানীয় জেলেরা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখে। আজও ওই অবস্থায় সেটি ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনটেইনারের গায়ে ‘ট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল' লেখা সীল মারা রয়েছে। এ ছাড়া কাস্টমসের অনুমোদিত সিল রয়েছে। এদিকে কনটেইনারের নিচে ও ওপরে কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে কনটেইনারের ভেতরে বস্তাভর্তি তুলা দেখা যাচ্ছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত রোববার ‘করিম শিপিং লাইনের কনটেইনারবাহী জাহাজ ‘কেএসএল গ্লেডিয়েটর’ পণ্যভর্তি ৮৩টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে হাতিয়া চ্যানেলে লাল বয়ার কাছে পৌঁছালে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে ৪৩টি কনটেইনার সাগর মোহনায় ছিটকে পড়েছে।

ভোলা বন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এসব কনটেইনার উদ্ধার করা জাহাজ মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাজ, বিআইডব্লিটিয়ের না।