ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল

অনিয়মের কারণে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া এই নিয়োগ কমিটির পাঁচজন সদস্য যাতে কোনো স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকতে না পারেন, সেই বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এক আদেশে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে এই ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

আদেশ অনুযায়ী, গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগপ্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়ায় এই নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করতে বলা হয়। এখন আরও বিশ্বাসযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত করে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটির বিষয়টি দেখভাল করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ জন্য ঢাকা বোর্ডকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত এপ্রিলে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়।

ওই নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন সংস্থাটির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী। বাকি চারজন সদস্য হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম, প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার, অভিভাবক প্রতিনিধি আতাউর রহমান ও মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

জানা গেছে, ২৬ এপ্রিল ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ নিয়োগের পরীক্ষায় ১৩ জন প্রার্থী অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষার অংশে নম্বর ছিল ৩০। লিখিত পরীক্ষায় নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন পান সাড়ে ৩ নম্বর। বাকি দুজনের একজন পান সাড়ে ৭ ও আরেক জন পান ৪ নম্বর। কিন্তু বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভায় লিখিত পরীক্ষায় সাড়ে ৩ নম্বর পাওয়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজর একজন শিক্ষককে অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং শিক্ষা সনদের যোগ্যতা মিলিয়ে তাঁকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় বলে পরিচালনা পরিষদরে পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তাজুল ইসলাম। তাঁর যুক্তি হলো, প্রচলিত পরীক্ষাপদ্ধতির হিসেবে ৩০ নম্বরের মধ্যে সাড়ে ৩ পেলে পাস নম্বরই হয় না। আবার লিখিত পরীক্ষায় যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হওয়া ওই প্রার্থীর কথা মাথায় রেখেই প্রশ্নপত্র করা হয়েছে। পরে জানা গেছে, ঘুষের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালকের স্ত্রী ওই প্রার্থী। নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে তখনই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়।

গত ডিসেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।