রামপুরায় ২ গৃহবধূর আত্মহত্যা, স্বামীসহ ৩ জন কারাগারে

ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি প্রতীকী
ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি প্রতীকী

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে দুই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় দুই গৃহবধূর স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

নিহত দুই গৃহবধূ হলেন বর্ণালি মজুমদার বন্যা (২৩) ও তানিয়া আক্তার (২০)। কারাগারে পাঠানো দুই আসামি হলেন বর্ণালির স্বামী মিথুন চন্দ্র দে (৩১), তানিয়ার স্বামী সুজন মিয়া (৩০) ও তাঁর ভাই সুজা মিয়া (২৫)।

৪ জুলাই পূর্ব রামপুরার জাকির রোডের ভাড়া বাসার ভেতর থেকে তানিয়ার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তানিয়ার বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে রামপুরা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ৪ জুলাই মামলা করেন।
এর দুই দিন আগে ২ জুলাই রাতে রামপুরার বনশ্রী এলাকার বাসা থেকে বর্ণালির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বর্ণালির মা শিখা রানী সেন বাদী হয়ে মেয়ের জামাই মিথুন চন্দ্র দের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় ৩ জুলাই মামলা করেন।

তানিয়ার আত্মহত্যা
তানিয়ার বোন আমেনা মামলার এজাহারে বলেন, এক বছর আগে তাঁর বোন তানিয়ার সঙ্গে সুজন মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তানিয়া জানতে পারেন, সুজন মিয়া এর আগে আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন, যা তিনি গোপন করেন। বিয়ের পর সুজন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তানিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। সুজন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা তানিয়াকে বলতেন, ‘তুই সুন্দর না, কেন যে তোকে বিয়ে করেছিল, তুই মর। তুই যদি মরিস তাহলে তোর চেয়ে সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে সুজনের বিয়ে দিতে পারব।’
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার সময় সুজনের শাশুড়ি জাহানারা বেগম তানিয়ার ভাড়া বাসায় আসেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তানিয়াকে বকাঝকা করেন। পরে তাঁর ভাই জাকির বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান, তানিয়ার ঘরের দরজা বন্ধ। পরে তানিয়ার লাশ ওই ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলক কুমার দে আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, আসামি সুজন মিয়া ও তাঁর পরিবার তানিয়াকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়েছে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি সুজন ও তাঁর ভাই সুজাকে জেলহাজতে আটক রাখার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে রামপুরা থানা-পুলিশ।

বর্ণালির আত্মহত্যা
বর্ণালির মা শিখা রানী সেন মামলার এজাহারে বলেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে মিথুন চন্দ্র দের বিয়ে হয় পাঁচ বছর আগে। বিয়ের পর আসামি মিথুন পরকীয়ায় জড়ান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায় ঝগড়াঝাঁটি হতো, মিথুন তাঁর মেয়েকে মারধর করতেন। তারপরও নিজের মেয়ের কথা চিন্তা করে বর্ণালি মুখ বুজে সব সহ্য করে আসছিলেন। বর্ণালিকে আসামি মিথুন প্রায়ই বলতেন, ‘তুই মর, তুই যদি মরিস তাহলে তোর চেয়ে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারব।’

এজাহারে আরও বলা হয়, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ২ জুলাই রাতে বর্ণালি বাসায় আত্মহত্যা করেন।
রামপুরা থানার এসআই কামরুল হক জিহান আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, বর্ণালি মজুমদারের সঙ্গে আসামি মিথুন চন্দ্র দে সংসার জীবনে খুবই খারাপ ব্যবহার করতেন। পরকীয়ার কথা বর্ণালিকে জানাতেন মিথুন। মিথুনের প্ররোচনায় বর্ণালি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
আদালত মিথুনকে এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।