২৮ স্কুলে আসবাব-সংকট

টেবিল ও বেঞ্চের অভাবে শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ। সম্প্রতি লালমনিরহাট সদরের বেড়পাঙ্গা কৃপানাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
টেবিল ও বেঞ্চের অভাবে শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ। সম্প্রতি লালমনিরহাট সদরের বেড়পাঙ্গা কৃপানাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটে ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন নতুন পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এগুলো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসবাব সরবরাহ না করায় এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কিছু বিদ্যালয়ের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২৮টি বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট সদরে ২টি, আদিতমারীতে ১টি, কালীগঞ্জে ১টি, হাতীবান্ধায় ১৫টি এবং পাটগ্রাম উপজেলায় ৯টি নতুন ভবন রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বেড়পাঙ্গা গ্রামের বেড়পাঙ্গা কৃপানাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান চলছে। ২৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিল। বেঞ্চ না থাকায় সব শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে মাদুরে বসে গণিত বিষয়ে ক্লাস করছে। পাঠদান করছেন সহকারী শিক্ষক সাজেদা শিরিন।

সাজেদা শিরিন বলেন, পুরোনো বেঞ্চে বসে ক্লাস করলে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা মেঝেতে পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। কারও কারও পোশাকও ছিঁড়ে যায়। কিছুদিন আগে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী পাখি ও মায়া বেগম ভাঙা বেঞ্চ থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের প্রাক্‌-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস ছুটির পর ওই শ্রেণিকক্ষের মাদুর এনে মেঝেতে বিছিয়ে পাঠদান করা হয়। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজুরুল হক বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে নতুন আসবাব সরবরাহ দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছি। কবে নাগাদ এসব আসবাবের সরবরাহ পাব তা জানি না।’ 

হাতীবান্ধা উপজেলার ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফা শিরিন বলেন, ‘সাত মাস আগে এলজিইডি নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবনটি হস্তান্তর করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের জন্য নতুন আসবাব সরবরাহ পাইনি।’

বেঞ্চ না থাকায় পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাতীবান্ধার পূর্ব বিছনদই ছকেলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান।

জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২৮টি বিদ্যালয় ভবন আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় হস্তান্তর করেছে। আরও ২৭টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পথে। নবনির্মিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোর বিপরীতে চাহিদা নিরূপণ করে অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে নতুন আসবাব সরবরাহ দেওয়া হবে। যত দিন এগুলো পাওয়া না যাচ্ছে, তত দিন বিদ্যালয়গুলোতে পুরোনো আসবাব ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

এলজিইডি লালমনিরহাট জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আমিরুজ্জামান বলেন, এলজিইডি শুধু বিদ্যালয় ভবনগুলো নির্মাণ করে দিয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে আসবাব সরবরাহের বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ দেখবে।