পানি-ল্যাট্রিন ছাড়াই কমিউনিটি ক্লিনিক

বিশ্বব্যাংকের একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে, ৬৪ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। ৩০ শতাংশ ক্লিনিকে ল্যাট্রিন নেই। ৩৪ শতাংশ ক্লিনিকে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। বিরাট সংখ্যক কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি, স্যানিটেশন ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা সীমিত পর্যায়ে।

‘অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন অ্যাকসেস ইন বাংলাদেশস কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকস’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি গত জুনের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষক ছাড়াও আন্তর্জাতিক এনজিও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, ওয়াটার গ্লোবাল প্র্যাকটিস ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গবেষকেরা এই প্রতিবেদন তৈরিতে যুক্ত ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি, ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার পরিস্থিতি অতি উদ্বেগজনক। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বহু ক্লিনিকে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে রয়েছে। কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের দেশি পরিচালক খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আমরা বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সরকার ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পানি, ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার উন্নত ব্যবস্থা করা। এগুলো দুর্বল রেখে গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব হবে না।’

>

বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন
দেশের ১৯ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি সরবরাহ, ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই

গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির উদ্যোগ নেয়। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্লিনিক গড়ে তোলে সরকার। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার আবার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। দেশে বর্তমানে ১৪ হাজারের কিছু বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। ক্লিনিকে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করেন। ক্লিনিক থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।

মূল্যায়নের সময় ১১ হাজার ৮৯১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর জরিপ করা হয়েছিল। জরিপের সময় ‘মৌলিক সেবা’, ‘সীমিত সেবা’ ও ‘সেবাহীন’—এই তিনটি মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়। পানির ক্ষেত্রে মৌলিক সেবার অর্থ, পানির উন্নত উৎস থাকবে কমিউনিটি ক্লিনিকেই। সীমিত সেবার অর্থ, পানির উৎস ক্লিনিকের ৫০০ মিটারের মধ্যে, তবে পানির সব চাহিদা পূরণ হয় না। সেবাহীনের অর্থ, পানির উৎস কোনো অরক্ষিত কুয়া বা নদী-নালার পানি; অথবা পানি আনতে হয় ৫০০ মিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে বা পানির কোনো ব্যবস্থাই নেই। ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার ক্ষেত্রেও এ রকম পৃথক মানদণ্ড আছে। মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২ হাজার ২৮০টি ক্লিনিকে বা ১৯ শতাংশ ক্লিনিকে পানি সরবরাহ, ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কার্যকর নেই।

প্রতিবেদন বলছে, যেসব উপজেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খর্বতার হার বেশি, সেসব উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পানি, ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার পরিস্থিতিও খারাপ। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে অনুন্নত, তবে এ অঞ্চলের কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি, ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো।

সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে খায়রুল ইসলাম বলেন, সরকার একসঙ্গে সব কমিউনিটি ক্লিনিকের পানি ও স্যানিটেশন সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। দুই-তিন বছর সময় নিয়ে কাজটি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও কাজে লাগানোর সুযোগ আছে।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন সরকারের কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক আবুল হাসেম খান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সচেতন। এখন থেকে নতুন মডেলের প্রতিটি ক্লিনিকে পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হবে।