কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে নিহত ২, আহত ৫

পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত ঘর। চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙামাটি, ৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত ঘর। চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙামাটি, ৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে শিশুসহ দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরে উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।

নিহতেরা হলেন, তাহমিনা আক্তার (২৫) ও সূর্য মল্লিক (৬)। আহতেরা হলেন, নিহত তাহমিনা আক্তারের বাবা আবদুর গফুর (৫০), খাদেজা বেগম (৪০), নিহত সূর্য মল্লিকের বাবা বাবুল মল্লিক, মা রত্না মল্লিক ও নানা সুনীল দাশ (৫৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর ১২টার দিকে মাঝারি আকারের বৃষ্টির সময় কলাবাগান এলাকায় বিকট শব্দ হয়। এরপরপরই দেখা যায়, সেখানকার আবদুল গফুর ও বাবুল মল্লিকের ঘর দুটি মাটি চাপা পড়েছে। এতে ঘর দুটির ভেতরে থাকা লোকজন বাইরে বের হতে পারেননি। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধারে চেষ্টা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারে অংশ নেয়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা তাহমিনা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করেন। মাটি চাপা পড়া দুই পরিবারের ছয় সদস্যকে চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে শিশু সূর্য মল্লিককে (৬) চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে।

পাহাড় ধসে দুটি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাপ্তাই, রাঙামাটি, ৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
পাহাড় ধসে দুটি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাপ্তাই, রাঙামাটি, ৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে দেখা গেছে, চন্দ্রঘোনার কলাবাগান গ্রামের কর্ণফুলী কাগজ মিল ও ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতাল সড়কের পশ্চিম দিকে একটি পাহাড়ের পাদদেশে এই ধসের ঘটনাস্থল। অন্তত ১০০ ফুট উঁচু থেকে পাহাড়ের কিছু অংশ ধসে আবদুল গফুর ও বাবুল মল্লিকের ঘরের ওপর পড়ে আছে। বিধ্বস্ত ঘর দুটির আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে।

নিহত সূর্য মল্লিকের বাবা বাবুল মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির আঙিনায় থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে তিনি একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এমন সময় বিকট শব্দের পর তাঁর জ্ঞান হারিয়ে যায়। পরে জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি বুক সমান মাটিতে চাপা পড়ে আছেন।

নিহত তাহমিনা আক্তারের বাবা আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যরা সবাই ঘরের ভেতরে ছিলাম। আমার মেয়ে তাহমিনা আক্তার রান্না ঘরে ছিল। প্রথমে রান্না ঘরে মাটি পড়ে। এতে আমরা কোনো রকমে বেঁচে গেলেও মেয়ে মারা যায়।’

পাহাড় ধসে আহত রত্না মল্লিকের আহাজারি। এই দুর্ঘটনায় তিনি ছয় বছর বয়সী ছেলে সূর্য মল্লিককে হারান। চন্দ্রঘোনা হাসপাতাল, কাপ্তাই, রাঙামাটি, ৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
পাহাড় ধসে আহত রত্না মল্লিকের আহাজারি। এই দুর্ঘটনায় তিনি ছয় বছর বয়সী ছেলে সূর্য মল্লিককে হারান। চন্দ্রঘোনা হাসপাতাল, কাপ্তাই, রাঙামাটি, ৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালের চিকিৎসক রাজীব শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ধসের ঘটনায় হাসপাতালে ছয়জনকে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই সূর্য মল্লিকের মৃত্যু হয়। আহত পাঁচজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, পাহাড়ধসের ঘটনায় আশপাশে পরিবারগুলোকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে প্রবল বর্ষণের পর পাহাড়ধসের ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় আহত হয় আরও দুই শতাধিক মানুষ। গত বছর ১২ জুন রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১ জনের।