সুন্দরবনের পাশের সব প্রকল্প বাতিলের দাবি

সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষা করতে হলে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। সুন্দরবন যাতে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হয়, সে জন্য এসব শর্ত পূরণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘সদ্য সমাপ্ত ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভা, উপকূল ও সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘চীন একই সঙ্গে বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। সুন্দরবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তালতলী বিদ্যুৎকেন্দ্র তারা নির্মাণ করছে। তারা একই সঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সদস্য হিসেবে তাদের প্রকল্পের ব্যাপারে বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের সুপারিশের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। আর রামপাল প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ভারত তাতে সমর্থন দিয়েছে। এই দুই দেশ তাদের নিজেদের প্রকল্পের স্বার্থে আমাদের সুন্দরবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ইউনেসকোর সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আবদুল মতিন ও সদস্য শরীফ জামিল। তাঁরা বলেন, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপরে একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) শেষ না করে সেখানে কোনো ধরনের শিল্পকারখানা না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল তাতে সম্মতি জানিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের ভেতরে যেসব তেলসহ মারাত্মক দূষণকারী পণ্য নিয়ে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে, তার কী প্রভাব পড়ল, সেই প্রতিবেদনও জমা দিতে বলেছে ইউনেসকো। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর জুন মাসে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান থাকবে কি থাকবে না।

শরীফ জামিল বলেন, চীন তার সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প একে একে বন্ধ করে দিচ্ছে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ এমনকি ভারতও তা-ই করছে। আর বাংলাদেশ একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে তার প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সরকার মনে মনে ভাবতে পারে, ‘তারা এই বছরের জন্য সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পেরেছে। ভারত ও চীনের সহায়তায় তারা এটা হয়তো করতে পেরেছে, কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম সরকার সুন্দরবন রক্ষা করে তা করুক। সুন্দরবন রক্ষায় রামপালসহ সব ধরনের ক্ষতিকর প্রকল্প বন্ধ না করলে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’