চাপাতি দিয়ে আমজাদকে ২৫ কোপ মারেন আসামি

নিহত আলী আমজাদ খান ছবি: সংগৃহীত
নিহত আলী আমজাদ খান ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আলী আমজাদ খানকে (৪০) হত্যার দায় স্বীকার করে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত শনিবার আসামির জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামির নাম আবদুর রহমান ডিপজল (২০)। আসামি জবানবন্দিতে বলেন, হত্যার সময় চাপাতি দিয়ে আমজাদকে ২৫টি কোপ মারেন তিনি।

গত ২ জুলাই বিকেলে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় সেন্টু ঘোষ নামের একটি মিষ্টির দোকানের ভেতর থেকে আলী আমজাদ খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আমজাদের ছোট ভাই আবদুল আওয়াল বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন।

আবদুল আওয়াল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই আলী আমজাদ খান যাত্রাবাড়ীর কাজলায় সেন্টু ঘোষ নামের মিষ্টি দোকানে চাকরি করতেন। আট থেকে নয় বছর ধরে ওই দোকানে তিনি চাকরি করে আসছিলেন। গত ৩ জুলাই বিকেলে জানতে পারেন, তাঁর ভাই খুন হয়েছেন।

মামলার এজাহার এবং পুলিশের তথ্য বলছে, নিহত আলী আমজাদ সারা দিন কাজ শেষে রাতে মিষ্টির দোকানেই থাকতেন। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাস করতেন।
আমজাদ খুন হওয়ার চার দিন আগে ওই দোকানে আবদুর রহমান ডিপজল চাকরি নেন। তিনিও কাজ শেষে রাতে আবদুর রহমানের সঙ্গে ঘুমাতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ২ জুলাই মিষ্টি বিক্রির ৯ হাজার ৭ শ টাকা আমজাদের কাছে রেখে যান মিষ্টির দোকান মালিক সেন্টু ঘোষ। ওই টাকা দোকানের ক্যাশেই রাখেন আমজাদ। রাত ১২ টার দিকে তিনি দোকানের কর্মচারী রহমানকে রেখে চা পান করতে যান। যাওয়ার আগে দোকানের শাটার নামিয়ে যান। চা পান শেষে দোকানে ঢোকার আগে শাটার নামিয়ে দোকানে ঢোকেন। দেখেন, রহমান ক্যাশ ভেঙে টাকা চুরি করছে।

আসামি আবদুর রহমান ডিপজল ছবি: সংগৃহীত
আসামি আবদুর রহমান ডিপজল ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ কর্মকর্তা বিলাল আল আজাদ আরও বলেন, টাকা চুরির সময় হাতেনাতে ধরে ফেলানোর পর রহমানকে জাপটে ধরেন আমজাদ। তখন রহমান দোকানের ছোট্ট ছুরি দিয়ে আমজাদের হাতে আঘাত করেন। আমজাদ তখন রহমানকে লক্ষ্য করে বটি ছুড়ে মারেন। মাথা নিচু করায় বটির আঘাত থেকে বেঁচে যান রহমান। রহমান তখন তাঁর ব্যাগে থাকা একটা চাপাতি বের করে আমজাদকে কোপাতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বমোট ২৫ টি কোপ দেয় রহমান। হত্যা করার পর দোকান থেকে বেরিয়ে শার্টারে তালা মেরে চলে যায়।

এসআই বিলাল আল আজাদ বলেন, রাত ৩টার সময় দোকান থেকে বের হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসেন রহমান। পরে চলে যান হবিগঞ্জে তাঁর এক খালার বাসায়। সেখান থেকে তিনি রহমানকে গ্রেপ্তার করেন।

আলী আমজাদ খানের ভাই আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের টাকায় সংসার চালাত। ভাই খুন হওয়ায় তাঁর পরিবার দিশেহারা। আবদুর রহমান তাঁর ভাইকে বিনা দোষে নৃশংসভাবে খুন করেছে। রহমানের ফাঁসি দাবি করেন আবদুল আওয়াল।

পুলিশ কর্মকর্তা বিলাল আল আজাদ বলেন, এর আগে রহমান জুরাইনের একটি দোকানে চাকরি করতেন। সেখানেও টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এরপর তাঁকে ওই দোকান থেকে বের করে দেওয়া হয়।