'এসআই বলেন, তুমি নাটক করছ কেন?'

নুসরাত জাহান।
নুসরাত জাহান।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি হত্যা মামলায় তাঁর ছোট ভাই রাশেদুল হাসান গতকাল সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার অসদাচরণের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর মাকে অধ্যক্ষ সিরাজ কীভাবে শাসিয়েছেন, তার বর্ণনাও রয়েছে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে।

আদালতে রাশেদুল বলেন, নুসরাতের শ্লীলতাহানির খবর পেয়ে তাঁর মা শিরিন আক্তার প্রতিবাদ করতে ২৭ মার্চ মাদ্রাসায় যান। এ সময় অধ্যক্ষ সিরাজ তাঁর মাকে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর দুই ছেলেমেয়েকে লাল কলমের খোঁচায় মাদ্রাসা থেকে বের করে দেব। ওই দিন অধ্যক্ষের কক্ষে মাদ্রাসার সহসভাপতি রুহুল আমিন (আওয়ামী লীগ নেতা), কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ও ইমাম উদ্দিন ভুঞা, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম ভুঞা উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর সোনাগাজী থানার এসআই ইকবাল হোসেন সেখানে পৌঁছান। পরে নুসরাতকে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। নুসরাত অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকেই অজ্ঞান হয়ে যান। এসআই ইকবাল কটাক্ষ করে নুসরাতকে বলেন, ‘নাটক করছ কেন? সেখানে উত্তেজনা বেড়ে গেলে অধ্যক্ষসহ সবাইকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওই দিন বিকেলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর মা বাদী হয়ে শ্লীলতাহানির মামলা করেন। পরে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সোনাগাজীর ওই মাদ্রাসায় নুসরাত ও তাঁর ছোট ভাই রাশেদুল হাসান পড়াশোনা করতেন।

রাশেদুল আদালতে বলেন, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নুসরাতের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। খবর পেয়ে দ্রুত অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে গিয়ে বোনকে (নুসরাত) কান্না করতে দেখেন তিনি। কেন কান্না করছেন, জানতে চাওয়া হলে কোনো জবাব দেননি নুসরাত। এতে তাঁর কান্না আরও বেড়ে যায়। তখন নুসরাতের বান্ধবী ফুর্তি (নাসরিন সুলতানা) ইশারা করে জানান, অধ্যক্ষ তাঁর বোনের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেছেন।

রাশেদুল আদালতে আরও বলেন, কান্নারত অবস্থায় নুসরাতকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি তাঁদের মা জানতে পারেন। অধ্যক্ষের কক্ষে যাওয়ার সময় নুসরাতের দুই বান্ধবী নিশাত ও ফুর্তি সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু অধ্যক্ষের নিষেধ থাকায় মাদ্রাসার পিয়ন নিশাত ও ফুর্তিকে কক্ষে ঢুকতে দেননি। তাঁরা দুজন অধ্যক্ষের কক্ষের বাইরে ছিলেন।

রাশেদুল আদালতে আরও বলেন, পরদিন ২৮ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির বিচার চেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোনাগাজী উপজেলা সদরে মিছিল-মানববন্ধন হয়। মিছিল করার অপরাধে কাউন্সিলর মাকসুদ ও শাহাদাত হোসেন শামীম একাধিক ছাত্রকে গালমন্দ করেন।