তিন সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে সড়ক অবরোধ, দুর্ভোগ

রিকশাশ্রমিক ও মালিকদের সড়ক অবরোধের কারণে মালিবাগ এলাকায় সকাল থেকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ছবি: প্রথম আলো
রিকশাশ্রমিক ও মালিকদের সড়ক অবরোধের কারণে মালিবাগ এলাকায় সকাল থেকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ছবি: প্রথম আলো

তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং তা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর রামপুরা বাজারের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন রিকশাশ্রমিক ও মালিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটার পরে তাঁরা এই সড়ক অবরোধ শুরু করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের অবরোধ-বিক্ষোভ চলছে।

সড়ক অবরোধের কারণে বেশ দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সকালে রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও মধুবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অফিসগামী মানুষ হেঁটে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে যাচ্ছেন। কোনো রিকশা নেই, এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যাও খুব কম। দু-একটি রিকশা দেখা গেলেও চালক যেতে রাজি হচ্ছেন না। স্কুলের উদ্দেশে সন্তানদের নিয়ে বের হয়ে অনেক অভিভাবকই দুর্ভোগে পড়েন। কোনো পরিবহন না পেয়ে তাঁদের রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখা গেছে।

রামপুরা এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ হিল ওয়ারিশ জানান, আজ সকাল আটটার দিকে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বের হন। তাঁর অফিস মতিঝিলে। অবরোধের কারণে অনেক যানবাহন সেখানে আটকে থাকে। তীব্র যানজটের পড়েন তিনি। বাধ্য হয়ে অনেকটা ঘুরে অফিসে পৌঁছান।

মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় বাচ্চাকে স্কুলে নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন শাহানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘সময়মতোই মালিবাগ থেকে বের হয়েছি। কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। হেঁটে গেছি। মেয়েটার খুব কষ্ট হচ্ছে।’

খিলগাঁওয়ে এলাকার বাসিন্দা ফারজানা বলেন, ‘আমার অফিস কারওয়ান বাজারে। সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হয়েছি। খিলগাঁও থেকে মগবাজার রেললাইন পর্যন্ত পুরোটা পথ হেঁটে আসতে হয়েছে। কোনো রিকশা পাইনি। দু-একটা রিকশা দেখেছি। যাবে কি না জানতে চাইলে চালকেরা জানান, রিকশা নিয়ে বের হওয়ায় টায়ার ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

খিলগাঁওয়ের আরেক কর্মজীবী নারী বলেন, ‘সব সময় রিকশাতেই যাওয়া–আসা করি। আজ কিছু না পেয়ে উবার মটোতে করে এসেছি।’

তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং তা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর রামপুরা বাজারের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন রিকশাশ্রমিক ও মালিকেরা। ছবি: আবদুস সালাম
তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং তা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর রামপুরা বাজারের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন রিকশাশ্রমিক ও মালিকেরা। ছবি: আবদুস সালাম

এ ব্যাপারে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুস ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিকশাশ্রমিক ও মালিকপক্ষের লোকজন অবরোধ করেছেন। তবে এখানে কোনো ধরনের সহিংসতা বা ভাঙচুর–মারামারির ঘটনা ঘটেনি। আমরা তাঁদের বোঝাচ্ছি। রিকশাশ্রমিকনেতারাও এসেছেন, তাঁরাও বোঝাচ্ছেন। আশা করছি, তাঁরা কিছুক্ষণ পরে উঠে যাবেন।’

গত রোববার থেকে রাজধানীর মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শাহবাগ এবং খিলক্ষেত থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই দিন সকাল থেকেই তিনটি সড়কে রিকশা প্রবেশে বাধা দেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।

গত ১৯ জুন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) বৈঠকে ‘ঢাকা মহানগরীর অবৈধ যানবাহন দূর/বন্ধ, ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে’ একটি কমিটি গঠন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী রোববার থেকে তিন সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন কমিটির আহ্বায়ক ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

সড়ক অবরোধের কারণে রাস্তায় বাড়ে যানজট। ছবি: আবদুস সালাম
সড়ক অবরোধের কারণে রাস্তায় বাড়ে যানজট। ছবি: আবদুস সালাম

রিকশা চলাচল বন্ধের বিষয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে ডিএসসিসির নগর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, তাঁদের পর্যালোচনা অনুযায়ী গড়ে ৭০ শতাংশ মানুষ নগরীর প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা এসব রাস্তায় গণপরিবহনও বাড়ানোর কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ডিএসসিসিসহ সরকারের অন্য সংস্থাগুলো কাজ করছে।