পাবনার একদিকে ভাঙা সড়ক, অন্যদিকে জলাবদ্ধতা

একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় পাবনা পৌরসভার বেশ কিছু এলাকার রাস্তা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। সম্প্রতি পাবনা পৌরসভার কালাচাঁদপাড়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় পাবনা পৌরসভার বেশ কিছু এলাকার রাস্তা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। সম্প্রতি পাবনা পৌরসভার কালাচাঁদপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পাবনা পৌরসভার সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। নালাগুলো সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। এদিকে চলতি বর্ষাকালে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পয়োনিষ্কাশন নালা থেকে আবর্জনা উঠে আসছে সড়কে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পাবনা পৌরবাসীকে।

পাবনা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে পাবনা পৌরসভা। আয়তন ১৭ দশমিক ২০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় ২ লাখ। পৌরসভায় আরসিসি রাস্তা রয়েছে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার, কার্পেটিং রাস্তা রয়েছে ১৫১ কিলোমিটার, হেরিংবোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তা রয়েছে ১৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে ১৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। পৌর এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পাকা নালা রয়েছে ১২০ কিলোমিটার এবং কাঁচা নালা রয়েছে ২২ কিলোমিটার। এসব নালা দিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার পানি গিয়ে পড়ছে শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীতে।

পৌর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত রাস্তা এবং নালা থাকলেও দীর্ঘদিন সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে না। ফলে রাস্তাগুলো ভেঙে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। অপরদিকে পয়োনিষ্কাশন নালা মেরামত না করায় বিভিন্ন স্থানে ভেঙে ময়লা–আবর্জনা আটকে রয়েছে। এতে বৃষ্টি হলে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নালা থেকে ময়লা–আবর্জনা উঠে সড়কে তৈরি হওয়া গর্তে আটকা পড়ছে। আর ভারী বৃষ্টি হলে পৌরসভার কিছু এলাকার বাড়ির আঙিনা ও ঘরে পানি উঠছে। এতে মহল্লার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধ রাস্তায় চলতে গিয়ে পথচারী, যাত্রী ও চালকেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সম্প্রতি পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানি সড়কসহ আশপাশের এলাকায় আটকে রয়েছে। কিছু এলাকা পানিতে থইথই করছে। শহরের শিবরামপুর মহল্লার আজাহার আলী সড়ক, শালগাড়িয়া মহল্লার তারক প্রামাণিক সড়ক, রাধানগর মহল্লার রথঘর সড়ক, মধ্য শহরের স্কয়ার সড়ক ও হাসপাতাল সড়ক ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। এর মধ্যে রিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাঙা সড়কের পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। এ ছাড়া জুগিপাড়া, আটুয়া, ময়নামতি, দক্ষিণ রাঘবপুর, দিলালপুর, শিবরামপুর ও শান্তিনগর মহল্লার বেশ কিছু সড়কে পানি, কাদা ও ময়লা-আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে, যা মাড়িয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শালগাড়িয়া তারক প্রামাণিক সড়কের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, তাঁদের মহল্লার সড়ক ও সড়কের পাশের নালাগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হচ্ছে না। ফলে সড়কজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নালায় আবর্জনা আটকে থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। মহল্লাবাসী পানি-কাদা ও ময়লা–আবর্জনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

শিবরামপুর মহল্লার আজাহার আলী সড়কের বাসিন্দা বাবু হোসেন বলেন, পুরো সড়কই গর্তে পরিপূর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তা পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ডুবো রাস্তায় চলতে গিয়ে যানবাহনগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। একই এলাকার আবদুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাড়িতে ঢুকতে ও বাড়ি থেকে বের হতে আমাদের কষ্টের সীমা নেই। আষাঢ়ের শুরুতেই যদি এমন হয়, সামনের দিনগুলোতে কী হবে, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।’

রাধানগর রথঘর সড়কে অবস্থানরত সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাদিকা জাহান বলেন, এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন চলাচল করে। অথচ সড়কটি পানি-কাদায় একাকার। একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে গোসল না করে উপায় থাকে না।

পাবনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান জানান, পাড়া–মহল্লায় একের পর এক নতুন বাড়ি উঠছে। এতে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা নষ্ট হচ্ছে। আর পানি নিষ্কাশন ঠিকমতো না হওয়ায় সড়কগুলো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যেও রাস্তাগুলো ঠিক রাখতে এবং পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মধ্য শহরের আওরঙ্গজেব সড়ক, সোনাপট্টি সড়ক এবং পাবনা কলেজ সড়ক উঁচু করে পাশ দিয়ে বিশাল নালা তৈরি করা হয়েছে। ফলে এ বছর শহরে পানি জমছে না। নতুন করে আরও কিছু নালা ও সড়ক মেরামতের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এগুলো দৃশ্যমান হবে।

পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের জন্য আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে শহরকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করছি। নিয়মিত পানি নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শহরবাসীকেই একটু সচেতন থাকতে হবে। অনেকেই নালায় ময়লা–আবর্জনা ফেলেন। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা রোধ করতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।’