'খাটের নিচ থেকে লাশ নিয়া দাফন কইরো'

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শারমিন আক্তার হত্যা মামলার আসামি আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শারমিন আক্তার হত্যা মামলার আসামি আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

যৌতুকের জন্যই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শারমিন আক্তারকে হত্যা করেছিলেন তাঁর স্বামী আমির হোসেন। হত্যার পর শাশুড়িকে ফোন দিয়ে মেয়ের লাশ নিয়ে যেতে বলেন তিনি। গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমির হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি)  বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ১ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের পাশে সাদেক খান রোডে একটি বাসায় খুন হন শারমিন আক্তার। তাঁর মুখে স্কচটেপ লাগানো ছিল। পায়ের রগ কাটা ছিল এবং শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। স্বামী আমির হোসেনের সঙ্গে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। ঘটনার পর আমির পালিয়ে যান। শারমিনকে প্রথমে উদ্ধার করে শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিনই আমির হোসেনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন শারমিনের বাবা। পরে মামলার তদন্ত ভার পায় পিবিআই। ঘটনার পরে আমির চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে আমিরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

পিবিআইয়ের ডিআইজি বলেন, যৌতুকের জন্যই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গত ৩০ জুন শারমিনের কাছে ১০ হাজার টাকা যৌতুক চান আমির। শারমিন তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমির ১ জুলাই সকালে তাঁর শাশুড়ি ফজিলাত বেগমকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তা না হলে মেয়েকে হত্যা করে খাটের নিচে ফেলে রাখবেন বলে জানান তিনি। শারমিনের মায়ের বাসা মোহাম্মদপুরের নবীনগরে। পরে ওই দিন ভোররাতে আমির শারমিনকে হত্যা করে শাশুড়িকে ফোন করে বলেন, ‘টাকা তো দিলা না, খাটের নিচ থেকে লাশ নিয়া দাফন কইরো।’ এর মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ ফজিলাত বেগমকে ফোন করে পঙ্গু হাসপাতালে আসতে বলে। সেখানে গিয়ে মেয়ের লাশ পান তিনি।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমির এর আগেও দুটি বিয়ে করেছিলেন। যৌতুকের জন্য বিয়ে করতেন। বিয়ে করে কাবিননামা গোপন করে আবার বিয়ে করতেন তিনি।

শারমিনের মা ফজিলাত বেগম প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শারমিন ছোট। ফোনে আমিরের সঙ্গে পরিচয় হয় শারমিনের। তাঁরা বিয়ে করেন। অনেক দিন ধরে মেয়ের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে এক মাস আগে মেয়ের খোঁজ পান। আমির প্রায়ই যৌতুকের জন্য শারমিনকে মারধর করতেন। একবার অনেক কষ্ট করে ছয় হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি।