২০৪১ সালের মধ্যে শাসনব্যবস্থা বিকেন্দ্রায়িত হবে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালে ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি মাথাপিছু আয় নিয়ে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। সোনার বাংলায় দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের কোনো ঘটনা। এ সময়ের মধ্যে দেশের শাসনব্যবস্থা বিকেন্দ্রায়িত হবে।

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সাংসদ এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। এ সময়ের মধ্যে দেশের শাসনব্যবস্থা বিকেন্দ্রায়িত হবে। সরকারি ব্যয়ের সিংহভাগ বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় পর্যায়ে, এ দায়িত্ব পালন করবে স্থানীয় প্রশাসন। পরিকল্পনা করা হবে স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রের সুস্পষ্ট সমন্বয়ের মাধ্যমে। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র।

বর্তমানে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে মন্তব্য করে সংসদ নেতা বলেন, বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আশা করা যায় বিদ্যমান পরিবেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সামনের দিনগুলোতে আরও বেগবান হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের ‘বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ও সম্ভাবনা, ২০১৯’ প্রতিবেদনে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে সবচেয়ে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ ছাড়া ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, এপ্রিল ২০১৯’ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী তিনটি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধির সমান। এ তালিকায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে রুয়ান্ডা, যার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

সরকারি দলের সাংসদ মো. শহিদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেকারত্ব দূর করতে বর্তমান সরকারের নানা পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাঁচ বছর মেয়াদে ১ কোটি ২৯ লাখ অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ২০ লাখ কর্মসংস্থানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ সময়ে ৯৯ লাখ শ্রম কর্মশক্তিতে যোগ দেবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার। শ্রমিকদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অংশ ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেশের শ্রম বাজারের প্রবেশ করছেন। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন ইপিজেডে ৩ লাখ ৫ হাজার ২৪২ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান সরকারের মেয়াদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৬৫ হাজার ৫৪৬টি পদ সৃজনের সম্মতি দিয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ হাজার ৬০৫টি পদের ছাড়পত্র প্রদান করেছে।

গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরের অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতির ধারাবাহিকতা ও বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে জাপানের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সরকারি দলের সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও এর যথাযথ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। ফলে সার্বিক উন্নয়নের সুফল দেশের সব জায়গায় সমভাবে বিস্তার লাভ করছে। উত্তরবঙ্গের কিছু জেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্য বিগত সরকারের আমল থেকেই বিদ্যমান। দেশের সুষম উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সচেষ্ট রয়েছে।