রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়ছে

ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে কয়েকজন কিশোরী। রাঙামাটি শহরের টেলিভিশন উপকেন্দ্র প্রবেশ ফটকে আজ বেলা দেড়টায় তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে কয়েকজন কিশোরী। রাঙামাটি শহরের টেলিভিশন উপকেন্দ্র প্রবেশ ফটকে আজ বেলা দেড়টায় তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়ছে। গত কয়েক দিনে ঝুঁকিতে থাকা দুই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটি শহরসহ বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির শুরু থেকে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে জেলা প্রশাসন। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রথমে তেমন আগ্রহ ছিল না ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকা মানুষের। গত সোমবার দুপুরে কাপ্তাই উপজেলা পাহাড়ধসে দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জেলা প্রশাসক ও কর্মকর্তারা গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার চাপ দেন। এরপর গত মঙ্গলবার ১২০ পরিবারে পাঁচ শতাধিক মানুষ চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার পর আরও দেড় হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি শহরে পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা নতুনপাড়া, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রূপনগর, শিমুলতলী এলাকা থেকে টিভি কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশ (বিএফডিসি), বিএম ইনস্টিটিউট ও যুব উন্নয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২১ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা রয়েছে।

গত সোমবার দুপুরে কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধস দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয় আরও দুই শতাধিক মানুষ। এ ঘটনার পর ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় চার হাজার আশ্রয় মানুষকে তিন মাসের বেশি রাখা হয়েছে। গত বছর ১২ জুন রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১ জনের।

রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১৩ মাইল এলাকায় সড়কের একাংশ ধসে গেছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারী বৃষ্টিতে। ঝুঁকিতে চলছে যান। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১৩ মাইল এলাকায় সড়কের একাংশ ধসে গেছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারী বৃষ্টিতে। ঝুঁকিতে চলছে যান। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রূপনগর থেকে টিভি কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আবদুল হালিম ও নতুনপাড়ার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ধসের আতঙ্ক থাকলেও বাড়িঘরে মূল্যবান জিনিস থাকায় পরিবারের কিছু সদস্যকে থাকতে হয়। তবে যাঁরা বাড়িঘরে থাকেন সর্তক ও রাত জেগে থাকতে হচ্ছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বাড়ছে। ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য ২১টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। তবে এর মধ্যে অনেকে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও তিনি অধিকাংশ সময় নিজের বাড়ি সময় কাটাচ্ছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তিন সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ
টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির তিন সড়কে যানচলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়কের এক অংশে পাহাড়ধস ও অন্য পাশে পাহাড়ধসে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যান চলাচল করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কে বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধসে সড়কের ওপর পড়ে এবং অন্য পাশে পাহাড়ধসে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল করছে। এর মধ্যে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের রাঙামাটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার অংশে সমাজকল্যাণ এলাকায় পাহাড়ধসে সড়কের একাংশ পড়ে গেছে। এ ছাড়া যৌথখামার ১৩ কিলো এলাকায় বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধসে যান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান, দেপ্পোছড়ি, যৌথখামার এলাকা পাহাড়ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কে দেওয়ান পাড়া এলাকা পাহাড়ধসে ঝুঁকিপূর্ণ ও তিনটি স্থানে পাহাড়ধসে সড়কের ওপর পড়ে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মূছা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ধসে তিনটি সড়কের বেশ কিছু স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। তবে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। বৃষ্টির কারণে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি থামলে পাহাড়ধস স্থানগুলোতে সংস্কার করা করা হবে। যান চলাচল চালু রাখতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।