জাহাঙ্গীরনগরে ইতিহাস অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত

অতিথিদের সঙ্গে সাভার আঞ্চলিক ইতিহাস অলিম্পিয়াডে পুরস্কার বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। জহির রায়হান মিলনায়তন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ জুলাই। ছবি: মাইদুল ইসলাম
অতিথিদের সঙ্গে সাভার আঞ্চলিক ইতিহাস অলিম্পিয়াডে পুরস্কার বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। জহির রায়হান মিলনায়তন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ জুলাই। ছবি: মাইদুল ইসলাম

‘নিজের শেকড়কে জানো, নিজেকে সমৃদ্ধ করো’ স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্ব (সাভার) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা উত্তর, সাভার, ধামরাই, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার ৩০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেয়।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন মুক্ত আসরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড কমিটি এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। আয়োজক পক্ষ জানিয়েছে, দেশে প্রথমবারের মতো ইতিহাস অলিম্পিয়াডের এমন আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হলো।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এই অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কমিটির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল জলিল ভূঁইয়া।

দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনা সভা। সভায় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিনের সংগ্রামে গড়ে তোলা ইতিহাস একটি জাতির পরিচয়কে তুলে ধরে। বাঙালি জাতি ইতিহাসে সেই পরিচয়ের জায়গাটা গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। বাঙালি যেখানেই যাক না কেন, বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে, বাঙালি সংস্কৃতির সবটুকু ধারণ করেই তাকে থাকতে হবে। তা না হলে মানুষের যে মর্যাদা তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন, যা বাঙালিকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে। তাই নিজের পরিচয়ের প্রশ্নে তোমরা কখনোই নিজেকে ক্ষুদ্র মানুষ মনে করবে না। তোমরা ইতিহাস যখন জানবে, জীবনের সত্যকে যখন জানবে, তখন মর্যাদার সঙ্গে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করে তুলতে সমর্থ হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এমরান জাহান বলেন, ‘ইতিহাস একটি জাতির গৌরব। দেশ, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, লোকসংস্কৃতি—এসব মিলেই ইতিহাস। নিজের শিকড়কে জেনে নিজেকে সমৃদ্ধ করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সে জন্য ইতিহাসের চর্চা থাকতে হবে। এ ধরনের আয়োজন সে পথকে সুগম করে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, ‘মানুষকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হলে নিজের শিকড়ের ইতিহাস জানতে হবে।’

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। আলোচনা সভা শেষে চারটি ক্যাটাগরিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শীর্ষ ১০ জন করে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশফাকুজ্জামান, সাহাদাত পারভেজ, সংগীতা আচার্য, মাহমুদ ইকবাল, হিমেল হোসেন, সাইফুল্লাহ সাদেক, ইমপ্রেস কমিউনেকেশনের কেএইচ হাসিবুজ্জামান, গবেষক জাকির হোসাইন জাকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।